আমাদের এই বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই অর্জিত দেশ। তাই বাংলাদেশের জনগণের অন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই একমাত্র চেতনা হওয়া উচিত। যেই চেতনার লক্ষ্যস্থলে আছে বঙ্গবন্ধু। ভবিষ্যত নতুন প্রজন্ম যারা এই বাংলাদেশকে স্মার্ট ও জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দেবে তাদের আদর্শ হওয়া উচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে, তারুণ্যের করণীয় কর্মযাত্রার গতিকে নির্দেশনা দিয়ে এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন যিনি, যিনি বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বদ্ধ পরিকর, যিনি জাতিকে ‘এগিয়ে চলো বাংলাদেশ’ বলে সামনে পথ দেখাচ্ছেন, তিনি আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শক্ত হাতে বাংলাদেশের দাঁড় ধরে বাংলাদেশকে উন্নয়নের সড়কে জোড় কদমে ছুটে চলেছেন, করছেন নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, করছেন এক একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
সাধারন জনগণের অসম্ভব কল্পনা বা অলীক স্বপ্ন তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি এখন বাস্তব হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এর মেধা ও মনন সহ আন্তরিক প্রচেষ্টায়। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথমিক ধাপ বাংলাদেশের মেট্রোরেল যুগ এখন স্বপ্নের চাবিকাটি ছোঁয়ানো ঘটনার, হয়েছে বাস্তবায়ন, সেই দৃশ্যমান বাস্তবায়নেরও একবছর পার করা হয়ে গেল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা হলো উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। সেই জন্যই গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর পর্যন্ত সবখানে রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ সবজায়গায় অবকাঠামোগত দৃশ্যমান প্রভূত উন্নয়নে বাংলাদেশের সৌন্দর্য বহুলাংশে বৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে, বিশ্বব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ করে, নিজস্ব অর্থায়নে, খরস্রোতা নদী পদ্মার উপর সেতু তৈরি করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যে আরেক বিস্ময় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেলও দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে।
৫২ বছর বয়সের এই বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাজারে একটা সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছেছে, শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের একটা স্থান হয়েছে, খেলার জগতে ক্রিকেট বিজয় দিয়ে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে, বিশেষ করে নারী ক্রিকেটার ও নারী ফুটবলারদের সাফল্যও কম নয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়ে মানবিকতার নিদর্শন দেখিয়েছেন পুরো বিশ্বকে, আখ্যায়িত হয়েছেন মানবতার মা হিসাবে। কোভিডের সময় সারা বিশ্ব যখন হিমশিম অবস্থা পার করছিলো তখন বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার সুশৃঙ্খল পরিচালনা ও গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিনামূল্যে টীকা প্রদানের মাধ্যমে, গরীব জনগোষ্ঠীকে প্রণোদনামূলক সাহায্যের মাধ্যমে সমাধান দিয়ে দেশকে আস্থার জায়গায় রাখতে সমর্থ হয়েছেন। সাধারণ জনগণের মাঝে একটা বিশ্বস্ত জায়গা সৃষ্টি করতে পেরেছেন।
সাধারণ জনগণ এর পরিচয়ের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার দূরদর্শী একটি সিদ্ধান্ত নারীদের স্বীকৃতি তথা সকলের স্ব স্ব মায়ের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রেও পিতার নাম বহাল রাখা নারীদের আত্মমর্যাদার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, যা নারী জাতির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। এভাবে দূরদর্শী নেতৃত্বের সফল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের মানুষের কাছে অপূর্ব এক নতুন স্বপ্ন জাগানিয়ার মূর্ত প্রতীক হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশে নয়, বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলের পথিকৃত রূপে পরিগণিত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও শেখ হাসিনার সাক্ষাতকালে ঋষি সুনাকের বক্তব্যে এই উদাহরণ প্রদীপ্ত হয়েছে। সুনাক শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেন, ‘আপনি উন্নয়নের রোল মডেল। আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি, আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা, আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক এর সদর দপ্তরে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ‘ডেভিড মালপাস’ এর হাতে যখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে করা পদ্মা সেতুর ছবি উপহার হিসাবে তুলে দিয়ে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করছিলেন, তখন মালপাস প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারেন, উদ্ভাবনী পদ্ধতির মাধ্যমে রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, ব্যাপক বিদ্যুতায়ন,এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ অন্যদেশ থেকে আলাদা। বাংলাদেশ এর সর্ব বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে আমরা দেশটির আয় বৃদ্ধি এবং দারিদ্র হ্রাসের অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই’।
আমাদের ভালো লাগার একটা বিষয় হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উন্নতি নিয়ে সবসময় তৎপর থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যজনক যে নারীরা বিশ্বব্যাপী মাত্র ১২ শতাংশ বিজ্ঞানী ৩০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের অবশ্যই মানসিকতা ও শিক্ষার পরিবেশের প্রতিবন্ধকতা দূর করার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে, যেন আরও বেশি সংখ্যক নারী ও মেয়ে বিজ্ঞানে উৎকর্ষ লাভ করতে পারে। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নিয়োজিত নারী ও মেয়েদের মনে রাখতে হবে যে, তারা একা নন, তারা যে পদক্ষেপগুলো নেন, তা বিশ্বজুড়ে তাদের বোনদের জন্য আরও দ্বার উন্মুক্ত করতে সাহায্য করবে’। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা নারী ও মেয়েদের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমাদের নারীরা গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে খুব ভাল করছে, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান তথ্য প্রযুক্তি সহ সবক্ষেত্রে গবেষণার জন্য মেয়েদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, মেয়েদের উৎসাহিত করার জন্য, বর্তমান সরকার সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখান থেকে মেয়ে বা ছেলে উদ্যোক্তা ২,শ ধরনের সেবা পাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের সবার সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী বেশ কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে’।
২০১৫ সালে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিজ্ঞানে নারী ও মেয়েদের শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক দিবসের লক্ষ্য ছিল, বিজ্ঞানে নারীদের অবদান ও কৃতিত্ব উদযাপনের মাধ্যমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত এর ক্ষেত্রে নারী পুরুষের ব্যবধান দূর করা। তাই প্রধানমন্ত্রী নারীদেরকে এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই আন্তরিক ভাবে বিজ্ঞানে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার সম্ভাবনা পূরণে অংশ গ্রহণ করুক এই প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেননা তিনি মনে করেন, অবশ্যই উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীদের জন্য বিদ্যমান সুযোগ লাভের বাধা দূর করতে হবে, যেন মেয়েরাও স্মার্ট জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে পূর্ণ সুযোগ সৃষ্টির সুযোগ গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সৃষ্টিশীল ও গতিময় নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিস্ময়কর ভাবে বদলে দিয়েছে, একথা শত্রুও বিশ্বাস করবে। প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলো প্রশংসার দাবীদার যেমন–মাই হাউস–মাই ফার্ম, কমিউনিটিক্লিনিক, ডিজিটাল সেন্টার, মাই ভিলেজ–মাই টাউন, ইত্যাদি কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং নানা সামাজিক নিরাপত্তামূলক কাজের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম এখন আর গ্রাম নেই, প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে তিনি নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি সমৃদ্ধির পথে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক বিপুল সংখ্যক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। অতি সমপ্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িক দ্যা ইকোনমিস্ট এর এক সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এশিয়ার লৌহমানবী তথা আয়রন লেডী বিশেষণে আখ্যায়িত করেছে। প্রতিবেদন মতে, ‘শেখ হাসিনা’ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধান। এমনকি নারী ও পুরুষ সম্মিলিত সরকার প্রধানদের মধ্যেও তিনি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যাপী ক্ষমতায় থাকা সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে একজন অনন্য প্রতিভাময়ী ব্যক্তি, কারণ আমরা তো জানি ১৫ আগস্টের পর নানা ঘাত প্রতিঘাত, শোক দুঃখে জর্জরিত অবস্থায় এবং ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগকে ফিনিঙ পাখির মতো জেগে উঠার ক্ষমতা দিয়েছিল একমাত্র শেখ হাসিনার মতো দৃঢ় নেতৃত্ব, যিনি শক্ত হাতে হাল ধরলেন এই বাংলাদেশের। বাংলাদেশিরাও তাকে বিশ্বাস করলেন। ১৯৮১ সালের ১৭মে দেশে ফিরে এসে শোককে শক্তিতে পরিণত করে নতুন করে জাগলেন, যেন বললেন,‘ঐ নতুনের কেতন ওরে, তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ এই জয়ধ্বনিতে কম বাধা আসেনি, সেই বাধাতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বোমা হামলায় আওয়ামীলীগের নেতাদের মানববর্ম এর প্রয়োজন হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে। মানুষের ভালোবাসা কারে কয়? সেদিন প্রমাণ হয়েছিল। সাধারণ মানুষের কত প্রাণ সেদিনও হয়েছিল বলীদান। এভাবে সকলের বিস্ময় হয়ে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন বাংলার মানুষের হৃদয় জুড়ে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নে, নারীজাতির বিস্ময়কর অহংকার হয়ে, বাংলাদেশের হৃদয় জুড়ে।
লেখক : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক