প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, প্রবীণ সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইহসানুল করিম হেলাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন, তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত ইহসানুল করিম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গতকাল রোববার রাত ৮টা ১০ মিনিটে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। খবর বিডিনিউজের।
জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম ২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার আগে ছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বলেছেন, ‘প্রেস সচিব হিসেবে তিনি অত্যন্ত সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যম হারালো একজন প্রিয় সহকর্মীকে আর আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত কর্মকর্তাকে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, হৃদরোগসহ নানা সমস্যা নিয়ে প্রায় মাসখানেক ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ইহসানুল করিম। দিন দশেক আগে তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়, সেখানে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার অবস্থা খারাপ হয়। আমরা চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ৮টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। উনার হার্টের সমস্যা ছিল। পাশপাশি শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস ছিল।
ইহসানুল করিমের জন্ম কুষ্টিয়া জেলায়, ১৯৫১ সালের ৫ জানুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন, পরে সাংবাদিকতায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন ইহসানুল করিম। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)-এর সদস্য হিসেবে পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে ১৯৭২ সালে ইহসানুল করিমের কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে পাঁচ বছর তিনি নয়া দিল্লিতে বাসসের ব্যুরো প্রধান ছিলেন। বিবিসি, পিটিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন ইহসানুল করিম, সহকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘হেলাল ভাই’ হিসেবে।
২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান ইহসানুল করিম। ওই বছরই তাকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ইহসানুল করিমকে। এরপর কয়েক দফা তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। ইহসানুল করিম তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে গেছেন।