প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে দেশীয় পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে মহেশখালীর সোনাদিয়া এবং টেকনাফের সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক করা হচ্ছে। যেখানে বিদেশি পর্যটকদের জন্য পৃথকভাবে সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। এছাড়া কোরাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
গত বুধবার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহুতল অফিস ভবন উদ্বোধনকালে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। পর্যটননগরী কক্সবাজারের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কক্সবাজার চমৎকার একটা জায়গা। এটা পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। কক্সবাজারবাসীর কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, অপরিকল্পিত কোনও স্থাপনা নির্মাণ করবেন না। কক্সবাজারে আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি। একটা মাস্টার প্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছি পুরো কক্সবাজারকে ঘিরে। আমরা চাই, এর উন্নয়নটা যাতে পরিকল্পিতভাবে হয়।
কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। এর সুনীল জলরাশি ও বিস্তৃত বালুকাবেলা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার মেলে ধরেছে তার ডানা। এই সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে মেরিন ড্রাইভ। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ এলাকার জন্য সত্যিই মনোহারী। এটি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে তুলবে। জানা যায়, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ। সড়কের একপাশে সবুজ গালিছা বিছানো পাহাড়, অন্যপাশে সুবিস্তীর্ণ সাগর। এ দুইয়ের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মেরিন ড্রাইভ। সড়কের ধারে নারকেল, সুপারি, ঝাউ গাছের সমাহার রয়েছে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত। সেই সঙ্গে গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য চিত্র ফুটে ওঠে এ মেরিন ড্রাইভ সড়কের ধারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, অবকাঠামোগত উন্নতির কারণে কক্সবাজারে এখন সারা বছর পর্যটকের আনাগোনা লেগেই থাকে। এখন আর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প শীতকালকেন্দ্রিক নয়। সারা বছর পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। তবে যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটকের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে ঈদ, বাংলা নববর্ষ, ইংরেজি নববর্ষসহ যেকোনো বড় ছুটির উপলক্ষ হলেই কক্সবাজারে ঢল নামে অসংখ্য পর্যটকের, যা কোনো কোনো সময় ধারণক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়।
তবু কক্সবাজার এখনো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পর্যটন স্পট হয়ে উঠতে পারেনি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হওয়ার পরও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে অনেক পিছিয়ে কক্সবাজার। এ জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকাকেই দায়ী করা হয়। এবার সেই দায় থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বলা হচ্ছে, কক্সবাজারকে আধুনিক, পরিকল্পিত ও পর্যটকবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নেয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে কক্সবাজারকে সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মতো নান্দনিক রূপ দিতে চায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। কউক-এর আশা, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শুধু দেশিই নয়, বিদেশি পর্যটকদের পদচারণে মুখর থকবে কক্সবাজার। এতে সারা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে রাজস্ব আয়ও।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারকে ভালোবাসতেন, কক্সবাজারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বারবার ভ্রমণে যেতেন। তাঁর সঙ্গে থাকত পরিবারের সদস্যরা। সে সময় আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েকবার জাতির জনকের সঙ্গে কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়েছিলেন, যা তিনি নানা সময়ে স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেন। বর্তমানে কক্সবাজার ঘিরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকার কাজ করছে। তিনি বিশ্বাস করেন, কক্সবাজার হলো বাংলাদেশের পর্যটনের কেন্দ্রভূমি। সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় সবার ভূমিকার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় সমুদ্রের লাল কাঁকড়া হারিয়ে গিয়েছিলো। হারিয়ে যাওয়া লাল কাঁকড়া ফিরে এসেছে। ডলফিনও মাঝে মাঝে দেখা মিলছে। তাই সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গঠন করা হয়েছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বহুতল বিশিষ্ট কউক ভবন উদ্বোধন হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেছেন, কক্সবাজারে পর্যটনের বিকাশে অন্যতম বাধা হলো অপরিকল্পিত উন্নয়ন। এখানে যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে ইট-পাথরের স্থাপনা। অনেক সময় পাহাড় কেটে প্রকৃতির ক্ষতি করে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এসব অনিয়ম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা তদারক করার জন্য সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সব প্রকার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও কক্সবাজারে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।