সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকী কারণের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। গত সোমবার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো রিয়াজ উদ্দিন এ চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, প্রদীপ ও চুমকী মোট ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন করেছেন। দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রদীপ-চুমকীর বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ ছিল। সেগুলো হলো- সম্পদের তথ্য গোপন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। তদন্তে এসব প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, চার্জশিটে ২৯ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। কোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য হবে।
গত বছরের ২৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬ (২) ধারা, ২৭ (১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশে একে অপরের সহযোগিতায় অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৩,১৩,১৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনপূর্বক মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং ৩,৯৫,০৫,৬৩৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাতসারে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর সম্পৃক্ত অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনপূর্বক উক্ত অবৈধ সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ দখলে রেখেছেন।
গত বছরের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওসি প্রদীপসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করা প্রদীপ বর্তমানে কারাগারে আছেন। ২৭ জুন এ মামলায় প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেখভালের জন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত। প্রদীপ ও তার স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিগুলো হলো- কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট, নগরীর পাথরঘাটার একটি বাড়ি, পাঁচলাইশের একটি জায়গা, একটি প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাস।