চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ স্মরণে দেয়ালিকা প্রদর্শনীতে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের ছবি না থাকায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল।
বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং এলাকার নতুন উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে এই প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব কামরুদ্দীন সবুজ।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, নুর শাহেদ খাঁন রিপন, জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. ফারুক, কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ফরহাদুল ইসলাম হৃদয়সহ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা।
মিছিল শেষে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুদ্দীন সবুজ বলেন,এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রদর্শনীতে শহীদ ওয়াসিম আকরামের ছবি না থাকার বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ঘটনার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও অফিসে গিয়ে উনাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এটার দায়িত্ব ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। কিন্তু সমন্বয়ক জুবায়ের আলম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, প্রদর্শনী আয়োজনের দায়িত্বে ছিল উপজেলা প্রশাসন। এই সাংঘর্ষিক বক্তব্যের কারণে আমরা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি।’
এদিকে, সমন্বয়ক জুবায়ের আলম তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘প্রদর্শনীটি ছিল তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের একটি আয়োজন। মোবাইল থেকে বের করা ছবিগুলোর মধ্যে ওয়াসিম আকরামের ছবি অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল ছিল, এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল এড়াতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি জেলা প্রশাসক কে জানানো হবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেন, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত একজন ফ্যাসিষ্ট খুনি হাসিনার আওয়ামী দোসর। ৫ তারিখ পরবর্তী অশান্তি ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা জনমনে অনেক প্রশ্ন। গতকাল উপজেলা পরিষদের উদ্বোধন উপলক্ষে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা বিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে বীর চট্টলার প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের ছবি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাদ দিয়ে আরেক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করেছেন তার এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এই আওয়ামী দোসর ইউএনও কে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসক মহোদয়, চট্টগ্রাম এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এছাড়াও তিনি আরো লিখেন ‘গত ১০ তারিখ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সমাবেশ চলাকালে ঐ মাসুমা জান্নাত যে একটা পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করেছিলেন যাহা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কিন্তু গতকালের ঘটনায় তাহা নিশ্চিত করিয়ে দিলো তার সকল কর্মকান্ড উদ্দেশ্য প্রণোদিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা অবিলম্বে তার ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
ওয়াসিম আকরামের ছবি অনুপস্থিত থাকার ঘটনায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের জন্য ইউএনওকে প্রত্যাহার বা বহিষ্কারের দাবি উঠেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম কর্ণফুলী উপজেলায় দিনব্যাপী সফর করেন। সফরে তিনি শহিদ মিনার, নবনির্মিত একাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম, সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনার উদ্বোধন করেন। এছাড়া ৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ স্মরণে দেয়ালিকা প্রদর্শনীও উদ্বোধন করেন।