প্রথম নদী সেতুতে যুক্ত হলো বাংলাদেশ ও ভারত

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১০ মার্চ, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর দিয়ে দুই দেশকে যুক্ত করা প্রথম সেতুর উদ্বোধন করলেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ এর উদ্বোধন করেন। একইসঙ্গে ত্রিপুরার সাবরুমে একটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টেরও ভিত্তি স্থাপন হয়।
এই সেতুকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অব্যাহত সহযোগিতার স্মারক হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি এই সেতু আমাদের দুই দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সেতুকে দুই দেশের মধ্যে নতুন ‘বাণিজ্য করিডোর’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য, মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। আর এই মৈত্রী সেতুর কারণে ত্রিপুরা হয়ে উঠল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নর্থ-ইস্টে পৌঁছানোর গেটওয়ে।
১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমকে যুক্ত করেছে। এই প্রথম কোনো নদী সেতু দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত যুক্ত হলো। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। সাত রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন দুই প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
১৩৩ কোটি রুপি ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড- এনএইচআইডিসিএল। সেতুর দৈর্ঘ্য ১.৯ কিলোমিটার। এটা রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমে যুক্ত হয়েছে। এই সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। ফলে বন্দর থেকে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে : প্রধানমন্ত্রী
ত্রিপুরাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি এই সেতু আমাদের দুই দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারবে।
একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরার সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভুলি নাই, ১৯৭১ সালে কীভাবে আমার জনগণকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম। কাজেই আজকের দিনে আমি সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী আপনাকেও আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে সঙ্গে নিয়ে আজ মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করা আমার জন্য অপার আনন্দের। এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপন করছি।
সম্পর্ক আরও মজবুত হবে : মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। নরেন্দ্র মোদী বলেন, ফেনী সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের কানেক্টিভিটি বাড়বে। ফলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেন, ফেনীর কাছেই চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এ সেতু দিয়ে সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে।
সড়ক উন্নয়নে ৮৫৪ কোটি টাকা : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, সড়ক যোগাযোগ উন্নত করতে ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড়-হেঁয়াকো-বারৈয়াহাট সড়ক প্রশস্ত ও সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। স্থলবন্দর চালু হলে দুই দেশের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
কাস্টমসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হলে দুই দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। সেতুসহ স্থলবন্দর চালু হলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আর্থসামাজিক পরিবর্তন হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন স্থাপনা নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াহিদ জানান, রামগড়ের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সড়ক যোগাযোগ আরো উন্নত করতে ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্ত ও সেতু নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। রামগড় থেকে বারৈয়াহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। বর্তমান সড়কের প্রশস্ত ১৮ ফুট। সেটি ৩৬ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। এছাড়া ৯টি সেতু ও ২৩টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনা : মাস্ক পরাসহ তিনটি বিষয় মানতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
পরবর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তারের ২২ দিন পর মুক্তি পেলেন কাউন্সিলর রাজিব