বিপিএল মানেই উইকেট আর দর্শক নিয়ে আলোচনা। বরাবরের মত এবারেও উইকেট নিয়ে সমালোচনা চলছে বিপিএলে। ঢাকায় শুরু হয়ে সিলেট হয়ে আবার ঢাকায় নোঙর করা এবারের বিপিএলের উইকেট নিয়ে কথা বলেছেন অনেকেই। এমনকি বিদেশি ক্রিকেটাররাও উইকেটের সমালোচনা করে গেছেন। যদিও তারা রান করেছেন। তারপরও ঢাকা এবং সিলেটের উইকেটকে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য আদর্শ উইকেট হিসেবে মনে করেনি তারা। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল চট্টগ্রামের উইকেট কেমন হয়। কারণ চট্টগ্রামেই যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিপিএলের চতুর্থ রাউন্ড। যদিও বরাবরই চট্টগ্রামের উইকেট মান রক্ষা করে বিপিএলের। তাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটের আচরণ কেমন হয় তা নিয়ে।
কথায় আছে–সকাল দেখে বুঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। প্রথম দিনেই চট্টগ্রামের উইকেটে যেন রানের বান ডেকেছিল। শুধু রান নয়, কী হয়নি গতকালের চট্টগ্রামের উইকেটে। একটি সেঞ্চুরি, দুটি হাফ সেঞ্চুরি, একটি হ্যাটট্রিক, দুটি চার উইকেট। আর কী চাই একটি ম্যাচে? এই ম্যাচে মোট রান হয়েছে ৪০৫। উইকেট পড়েছে ১৪টি। যা টি–টোয়েন্টিতে খুব কমই দেখা যায়। দুই ইনিংস মিলে চার হয়েছে ৩২টি আর ছক্কা ২৬টি। যেখানে কুমিল্লা চার মেরেছে ১৭টি আর ছক্কা মেরেছে ১৮টি। চট্টগ্রাম চার মেরেছে ১৫টি আর ছক্কা ১১টি। বলা যায়, প্রথম ম্যাচেই ফুল মার্ক পেয়েছে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট।
প্রথম দিনেই প্রথমে ব্যাট করা দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে। যদিও রেকর্ডটিতে ভাগ বসিয়েছে এই ইনিংস। কারণ পাঁচ বছর আগে এই মাঠেই যে ২৩৯ রান করেছিল রংপুর রাইডার্স। কাকতালীয়ভাবে সে ইনিংসটা এসেছিল চট্টগ্রামের বিপক্ষে। সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে দর্শকরা চায় চার আর ছক্কার মার। সেটাই যেন দেখা গেল গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। প্রথম দিনেই সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরি সবই হয়েছে। কুমিল্লার ওপেনার উইল জেকস করেছেন ১০৮ রান। যা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১১তম বিপিএল সেঞ্চুরি। বিপিএলের মোট ৩১টি সেঞ্চুরির মধ্যে ১১টি এসেছে চট্টগ্রামের মাঠে। গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের যে উইকেটে দিনের প্রথম ম্যাচটি হয়েছে তাতে একেবারে সাবলিলভাবে শট খেলতে পেরেছে ব্যাটাররা। যা টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেখতে চায় দর্শকরা। এই মৌসুমের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটাও এসেছে এই মাঠে। যা করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ইংলিশ স্পিনার মঈন আলি।
এবার আসা যাক দর্শকের কথায়। ঢাকায় ছুটির দিন ছাড়া তেমন দর্শক আসেনি মাঠে। সিলেটে দর্শক উপস্থিতি বেশ ভালই ছিল। তবে চট্টগ্রামে প্রথম দিনেই গ্যালারি ভর্তি করে রেখেছিল দর্শকরা। ভর দুপুরে প্রথম ম্যাচটি শুরু হলেও তার অনেক আগে থেকেই আসা শুরু করেন দর্শকরা। যেহেতু প্রথম ম্যাচটি ছিল চট্টগ্রামের, তাই দর্শকদের আকর্ষণটাও ছিল একটু বেশি। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে দর্শক উপস্থিতি। বিশেষ করে পশ্চিম পাশের গ্যালারি ছিল একেবারে পরিপূর্ণ। পূর্ব গ্যালারিরও বেশিরভাগ ছিল ভরা। যদিও শেষ পর্যন্ত মন ভরেনি চট্টগ্রামের দর্শকদের। কারণ তাদের দল হেরে গেছে প্রথম ম্যাচে। তারপরও দর্শকদের মাঝে উৎসাহ উদ্দিপনার কমতি ছিল না।
কাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। বর্তমানে ক্রিকেটের বেশিরভাগ দর্শক এই স্কুল কলেজের ছাত্ররা। তাই হয়তো দর্শকে পরিপূর্ণ হয়নি জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি। তবে যারা মাঠে এসেছিল তারা টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরিপূর্ণ স্বাদটাই যেন পেয়েছে গতকাল। মাঠ, উইকেট, দর্শক সব মিলিয়ে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিনটা বেশ ভালই কেটেছে তেমনটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।