স্বাগতিক চট্টগ্রামের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চট্টগ্রাম রিজিওনাল টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। গতকাল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাগতিক এশিয়ান চট্টগ্রাম ৫ উইকেটে ইস্পাহানি ফেনীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মত আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেয়। বল হাতে চট্টগ্রামের দুই স্পিনার রুবেল এবং রিফাত চট্টগ্রামের জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল। এ দুজনের বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে খুব বড় স্কোর গড়তে দেয়নি। পরে চট্টগ্রামের ব্যাটাররা দলকে পৌঁছে দেয় জয়ের বন্দরে। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে এই ফেনীর কাছে হেরেছিল চট্টগ্রাম। গতকাল ফাইনালে যেন সে হারের শোধও নিয়ে নিল। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত খেলা চট্টগ্রাম ফাইনালেও খেলল দুর্দান্ত। রুবেল– রিফাতের বোলিং এর পর সাদিক এবং অধিনায়ক ইরফানের ব্যাটিং চট্টগ্রামের জয়ে মুখ্য ভুমিকা পালন করে। ফেনীর করা ১১৬ রান ৭ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় চট্টগ্রাম। এই ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামল দেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত এই রিজিওনাল টুর্নামেন্টের। বলা যায় সফল একটি আয়োজন সম্পন্ন হলো। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ইস্পাহানী ফেনী শুরুটা ভালই করেছিল। দুই ওপেনার জিল্লুর এবং সাব্বির ২১ রান যোগ করেন। প্রথম ওভারে বল করতে এসে এজুটি ভাঙ্গেন রুবেল। একই ওভারে দুই ওপেনারকে ফেরান রুবেল। জিল্লুর ৭ এবং সাব্বির ১৪ রান করে ফিরেন। তৃতীয় উইকেটে শাহরিয়ার এবং মিনহাজ সাকিব মিলে যোগ করেন ২৭ রান। ১৭ বলে ১৬ রান করা শাহরিয়ারকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন রতন দাশ। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে মৃত্তিক নাথকে ফেরান রিফাত। একই ওভারে ফাহাদকেও ফেরান রিফাত। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করার চেষ্টা করছিলেন মিনহাজ সাকিব। কিন্তু তাকেও বেশিদুর যেতে দিলেননা রুবেল। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে ২৭ রান করা মিনহাজকে ফেরালেন রুবেল স্টাম্পিং এর ফাদে ফেলে। এরপর রায়হান কেবল একটু লড়াভ করেছে। বাকিরা কেবলই আসা যাওয়া করেছে। বিশেষ করে মোহাম্মদ রুবেলের স্পিনের সামনে দাড়াতে পারেনি ফেনীর পরের ব্যাটাররা। ২৪ বলে ২৬ রান করা রায়হানও রুবেলের শিকার হয়ে ফিরেন। শেষ পর্যন্ত এক বল বাকি থাকতে ১১৬ রানে অল আউট হয় ফেনী। চট্টগ্রামের পক্ষে রুবেল ১৭ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। সেমি ফাইনালেও নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। সাজেদুল আলম রিফাত ১৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। জবাব দিতে নামা চট্টগ্রাম শুরুতেই ধাক্কা খায়। প্রথম ওভারেই ফিরেন ওপেনার কপিল। ২ রান করেন কপিল। সে ধাক্কা না সামলাতেই আরো বড় ধাক্কা চট্টগ্রামের জন্য। এবার ফিরলেন শাহাদাত হোসেন দিপু। ৩ রান আসে দিপুর ব্যাট থেকে। ১৪ রানে দুই উইকেট নেই চট্টগ্রামের। তৃতীয় উইকেটে সাদিক এবং শহীদ মিলে ভালই এগুচ্ছিলেন। কিন্ত ৪৩ রানে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ২১ রান করা শহীদকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন সাজ্জাদ। শুরু থেকেই দলকে টানতে থাকা সাদিক শেষ পর্যন্ত রনে ভঙ্গ দেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি মিস করে। ৩৭ বলে ২ টি চার এবং ২ টি ছক্কায় ৪২ রান করে ফিরেন সাদিক। রিপন গিয়েও দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেনি। ফিরেছেন ২ রান করে। তবে অধিনায়ক ইরফান শুক্কুর আর কোন সুযোগ দেননি প্রতিপক্ষ বোলারদের। ৭ বল এবং ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতান তার দলকে। ২৯ বলে ৩ টি চারের সাহায্যে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক। ফেনী জেলার পক্ষে ২ টি উইকেট নিয়েছেন মিনহাজ সাকিব। একটি করে উইকেট নিয়েছেন ইয়াছিন, সাজ্জাদ হোসেন এবং সাজ্জাদ রায়হান। চট্টগ্রাম জেলা দলের মো. রুবেল ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কাার লাভ করেন ফেনী জেলা দলের শাহরিয়ার আহমেদ। গতকাল খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এবং এই টুর্নামেন্টের সদস্য সচিব এবং বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির চোরম্যান আকরাম খান।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান গ্রুপের পরিচালক ওয়াসিফ আহমেদ সালাম, ইস্পাহানী টি লিঃ এর জেনারেল শ্যানেজার টি ট্রেড শাহ মাঈনুদ্দিন হাসান। এছাড়া অনুষ্ঠানে ছয় দলের পুষ্ঠপোষকদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আকরাম খান। পরে তিনি এবং অতিথিবৃন্দ চ্যাম্পিয়ন এবং রানারআপ দলের হাতে ট্রফি এবং পুরস্কারের চেক তুলে দেন।