চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে থেরাপিউটিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। দূরারোগ্য ব্যাধি গুলিয়ান বার সিন্ড্রোম (জিবিএস) আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী অঞ্জনা রানীর (৩৮) চিকিৎসায় গতকাল প্রথমবারের মতো এই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে হাসপাতালে। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আইসিইউতে এই থেরাপিউটিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জ করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চিকিৎসা সেবায় এটি চমেক হাসপাতালে অনন্য সংযোজন বলেও দাবি চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের।
চিকিৎসকরা বলছেন– সারাবিশ্বে এই রোগের চিকিৎসায় দুটি আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে। এর মাঝে একটি থেরাপিউটিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জ এবং অপরটি ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন থেরাপি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারীভাবে থেরাপিউটিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জে প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ পড়ে (৫টি থেরাপীর ক্ষেত্রে)। তবে একই চিকিৎসায় (৫টি থেরাপি) সরকারি ফি ২৫ হাজার টাকাসহ আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে ২ লাখ টাকার মধ্যে এ চিকিৎসা সম্ভব চমেক হাসপাতালে। চমেক হাসপাতালে এ পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ।
গতকাল প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে এই পদ্ধতি প্রয়োগকালীন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, নিউরোমেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, এনেসথেসিয়া এবং আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশীদ, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রধান ডা. তানজিলা তাবিব চৌধুরী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অন্যান্যের মাঝে নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. পঞ্চানন দাস, সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম খন্দকার, সহকারী অধ্যাপক ডা. জামান আহমেদ, রেজিস্ট্রার ডা. পিযুষ মজুমদার, এনেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দা নাফিসা খাতুন, মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শেখ উল আলম, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ নাফিজ আলম, মেডিকেল অফিসার ডা. মুনাসিব নুর ও ডা. ফাহমিদা মনসুর, আইসিইউ বিভাগের স্টাফ নার্স রিঙ্কু দাশ এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট মোখলেসুর রহমান এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে অংশ নেন।
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান– আধুনিক এই পদ্ধতি প্রয়োগে বর্তমানে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে এই বিভাগে। অপরিহার্য কীটের দাম বেশি হওয়ায় এখন খরচ দুই লাখের মতো লাগতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পেলে এই খরচও অর্ধেকের নীচে নামিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সরকারি সহায়তা ও উদ্যোগ জরুরি।
আধুনিক এবং ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা পদ্ধতি স্বল্প খরচে শুরু করায় ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ ও নিউরোমেডিসিন বিভাগ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, সরকারি পর্যায়ে এই চিকিৎসা পদ্ধতির খরচ ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সরকারিভাবে যেন কীটের সরবরাহ করা হয়, আমরা সে চেষ্টা চালাব। এটি করা সম্ভব হলে অনেক গরীব–অসহায় রোগী এখানে ন্যূনতম খরচে এ চিকিৎসা সেবা পাবেন।