অনেক বড় বড় তারকার সমাবেশ ঘটিয়েছিল ফলাসি ক্লাব পিএসজি। অনেকবার ফরাসী লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সে অধরা স্বপ্ন ধরা দিল পিএসজির হাতে। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের আনন্দে ভাসল লুইস এনরিকের দল। মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শনিবার রাতের শিরোপা লড়াইয়ে ৫–০ গোলে জিতেছে পিএসজি। ৫৪ বছর বয়সী ক্লাবের নতুন এই ইতিহাস লেখার নায়ক ১৯ বছর বয়সী দিজিরে দুয়ে। আশরাফ হাকিমির গোলে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার পর দুই অর্ধে একটি করে গোল করেন তরুণ ফরাসি ফরোয়ার্ড দুয়ে। পরে বাকি দুটি গোল করেন খাভিচা কাভারাৎস্খেলিয়া ও সেনি। ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে ফাইনালে এত বড় জয় আগে কোনো দল পায়নি। এর আগে সর্বোচ্চ ৪ গোলের ব্যবধান দেখা গিয়েছিল চারবার; ১৯৬০ সালে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে রেয়াল মাদ্রিদ ৭–৩ গোলে, ১৯৭৪ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখ ৪–০ গোলে, ১৯৮৯ সালে এফসিএসবির বিপক্ষে এসি মিলান ৪–০ গোলে এবং ১৯৯৪ সালে বার্সেলোনার বিপক্ষে এসি মিলান ৪–০ গোলে জিতেছিল। শিরোপা লড়াইটি কতটা একতরফা হয়েছে, তার যথাযথ প্রমাণ স্কোরলাইনের পাশাপাশি মিলছে অন্যান্য পরিসংখ্যানেও। প্রায় ৬০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে পিএসজি গোলের জন্য ২৩ শট নিয়ে আটটি লক্ষ্যে রাখতে পারে। বিপরীতে ইন্টারের আট শটের দুটি ছিল লক্ষ্যে, অবশ্য সেগুলোও তেমন ভীতি ছড়াতে পারেনি। গোলের জন্য ১০ মিনিটের মধ্যে তিনটি সাদামাটা প্রচেষ্টার পর, দ্বাদশ মিনিটে একই সঙ্গে সুন্দর ও সহজ গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। ভিতিনিয়ার পাস ডি–বঙে ধরে সামনে একপলকে দিজিরে দুয়ে দেখলেন গোলরক্ষক তার দিকে এগিয়ে আছে, মুহূর্তেই তিনি পাস বাড়ালেন অন্য পাশে হাকিমিকে। ফাঁকায় বল পেয়ে বিনা বাধায় জালে ঠেলে দিলেন মরক্কোর রাইট–ব্যাক। ২০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে পিএসজি। প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণ রুখে দিয়ে, তড়িৎ পাল্টা আক্রমণে ওঠে তারা। সতীর্থের পা থেকে ডি–বঙে বল পেয়ে শট নেন দুয়ে। সামনে ডিফেন্ডার ফেদেরিকো দিমার্কোর পায়ে লেগে একটু দিক পাল্টে বল যায় জালে। বিরতির পরও একইরকম দাপুটে শুরু করে পিএসজি। এই অর্ধের প্রথম সাত মিনিটে আরও তিনটি শট নেয় তারা, যদিও একটিও লক্ষ্যে ছিল না। সেমি–ফাইনালের দুই লেগে বার্সেলোনার বিপক্ষে দুই মহাকাব্যিক লড়াইয়ের জন্ম দেওয়া ইন্টার মিলান এবার আর পারল না তেমন কিছু করতে। ৬৩ মিনিটে আরেকটি দুর্দান্ত গোলে তাদের সব আশা প্রায় শেষ করে দেয় পিএসজি। ডি–বঙে বল পেয়ে নিখুঁত শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ম্যাচ সেরা দুয়ে। এরপরও বাকি যা একটু অনিশ্চয়তা ছিল, বলা যায় তা শেষ হয়ে যায় ১০ মিনিট পর। মাঝমাঠ থেকে উসমান দেম্বেলের থ্রু পাস ধরে ক্ষিপ্রতায় ডি–বঙে ঢুকে নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন জর্জিয়ার ফরোয়ার্ড কাভারাৎস্খেলিয়া। তাদের গোল উৎসবের তখনও অবশ্য বাকি। ৮৪তম মিনিটে ফাবিয়ান রুইসের বদলি নামার দুই মিনিট পরই জালের দেখা পেয়ে যান আরেক ১৯ বছর বয়সী সেনি। দুরূহ কোণ থেকে জোরাল শটে ইয়ান সমেরকে পরাস্ত করেন ফরাসি মিডফিল্ডার। সাফল্যে ভরা মৌসুমে ফরাসি সুপার কাপ, ফরাসি কাপ, লিগ আঁয়ের পর তারা উঁচিয়ে ধরল স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি।