কোনো সমাজের ক্ষমতাবান মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব লোপ পেলে সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে; সমাজে অশান্তি বিরাজ করে, মানুষ নির্লজ্জ হয়ে যায়। প্রতিটি পর্যায়ে আইনহীনতা দেখা দেয়। সমাজ অশিক্ষা–কুশিক্ষায় ছেয়ে যায়। মিথ্যাবাদী ও অন্যায়কারীদের দাপট বেড়ে যায়। ভয়ে সাধারণ মানুষ মিথ্যার দাপটের কাছে হার মানে। সমাজের মনুষ্যত্বহীন স্বার্থান্বেষী লোকেরা হীন স্বার্থ উদ্ধারে মিথ্যাবাদী ও অন্যায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ভালো মানুষের পক্ষে সমাজে মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। এসবই মনুষ্যত্বহীনতার উপসর্গ। শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি মনুষ্যত্বের জাগরণ হয়, সমাজ যদি শিক্ষিত লোকদেরই হয়–তাহলে পত্রিকার পাতা উলটালেই চারদিকে পশুত্ব ও পাশবিকতার জয়ধ্বনি কেন? মানুষ প্রতিনিয়ত অপরাধ করছে, টাকা লুটপাট করছে, আবার অপরাধকারীরা সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন? সৎপথে জীবন নির্বাহ করতে অসৎ, প্রতারক ও অশিষ্টদের প্রতিনিয়ত উঠতে–বসতে সালাম ঠোকার প্রয়োজন হয় কেন? সৎ ও নিষ্ঠাবান লোকের প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা করা হয় কেন? এত সব ‘কেন’র উত্তর কেউ দিতে প্রস্তুত নয় কেন? মনুষ্যত্বসুলভ চিন্তা–চেতনা মানুষের মধ্যে না থাকলে সমাজ অশান্ত হয়ে ওঠে, সমাজ ও রাষ্ট্র বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। মানুষ শুধু মনুষ্যত্বের গুণাবলীসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই পৃথিবীতে মানুষের বসবাস শান্তিময় হয়ে উঠতে পারে। স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে নিজের বিশ্লেষণ নিজেই করে সমাজে মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিসহ প্রতিটি পেশাতেই এখনো অনেক মনুষ্যত্বজ্ঞানে উজ্জীবিত মানুষের মতো মানুষ রয়ে গেছেন। তাদের আত্মোপলব্ধি জাগরিত হতে হবে। মিথ্যার আগল ভেঙে শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নের জন্য বেরিয়ে আসতে হবে। সমাজে সুশিক্ষিত লোককে কাজ করার জন্য জায়গা করে দিতে হবে। সুশিক্ষিত লোকদেরই সমাজ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে সুশিক্ষিত লোকদের শিক্ষা–কর্মের ছোঁয়ায়, আঁধার দূরীভূত হয়ে ক্রমেই আলোকিত হওয়ার মতো সুখ–শান্তিতে ভরা সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন দেশ আমরা নিশ্চয়ই পাব।
লেখক : সহকারী শিক্ষক
উত্তর আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম