প্রত্যাশা অনুযায়ী গাড়ি চলছে না

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে । ২২ ঘন্টায় চলেছে ৬ হাজার ১৬টি গাড়ি, টোল আদায় ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা র‌্যাম্পগুলো চালু হলে যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে : সিডিএ

হাসান আকবর | রবিবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী যানবাহন চলাচল করছে না। র‌্যাম্প নির্মিত না হলে যানবাহন প্রত্যাশা স্পর্শ করবে না। র‌্যাম্পের সংখ্যা ১৫টি থেকে কমিয়ে ৯টি করা হয়েছে। র‌্যাম্পগুলো দ্রুত নির্মাণ সম্পন্ন করা না গেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণ করা এই এক্সপ্রেসওয়ের সরকারি ঋণ শোধ করা কঠিন হবে। বর্তমানে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করছে তাতে এক্সপ্রেসওয়ের পরিচালন ব্যয় তোলাও অসম্ভব হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ২২ ঘণ্টায় এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল করেছে ৬ হাজার ১৬টি। টোল আদায় হয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৬শ টাকা। অথচ এই এক্সপ্রেসওয়েতে দৈনিক ৮০ হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচলের সমীক্ষা ছিল। তবে কয়েক ক্যাটাগরির গাড়ি বাদ দেওয়ার পরও এক্সপ্রেসওয়েতে দৈনিক ৬০ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচলের কথা। কানেক্টিভিটি গড়ে না ওঠায় নগরবাসী এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারছে না বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াসা মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটির পুরো অর্থায়ন করে সরকার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকা সরকার অনুদান দেয়। বাকি ৫২৪ কোটি টাকা সরকার ঋণ হিসেবে প্রদান করে। ঋণের এই টাকা সরকারকে পরিশোধ করবে সিডিএ। এজন্য নগরীতে ইতোপূর্বে সরকারি টাকায় সিডিএ নির্মিত তিনটি ফ্লাইওভার টোল ফ্রি থাকলেও এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল বাস্তবে তার থেকে দূরে থাকায় সরকারের ঋণ পরিশোধে সিডিএকে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

চুয়েট ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্ট অ্যান্ড কনসালটেশনের এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছিল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে প্রতিদিন প্রায় ৮১ হাজার ৪৭১টি যানবাহন চলাচল করবে। এর মধ্যে কার ও সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার যানবাহন ৩৯ হাজার ৪২৮টি, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, জিপ ৬ হাজার ৫১৩টি, মিনিবাস ও পিকআপ ৫ হাজার ৩৮টি, বাস ৩ হাজার ৩৮৯টি, ট্রাক ৫ হাজার ৬৬৪টি, লরি ও ট্রেইলর ৬৭৭টি, মোটরসাইকেল ৫ হাজার ৮১৪টি, ঠেলাগাড়ি ৫৯০টি এবং রিকশা ১৪ হাজার ৩৫৮টি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে সিডিএকে এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চালানোর অনুমোদন দিয়ে টোল হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কন্টেনার ট্রেইলর ও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রিকশা কিংবা ঠেলাগাড়ির ব্যাপারটি বিবেচনায়ও আনা হয়নি। এই চার ক্যাটাগরির গাড়ি বাদ দিলেও সমীক্ষায় উল্লেখিত অপরাপর গাড়ির সংখ্যা থাকে ৬০ হাজার ৩২টি। অথচ গাড়ি চলছে ৫ হাজারের কম। এর মধ্যে সিএনজি টেক্সি এবং প্রাইভেটকারের সংখ্যাই বেশি। এসব গাড়ি থেকে যে পরিমাণ টোল আদায় করা হচ্ছে তা দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকর্মচারীদের বেতনভাতা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ খরচ ওঠানো কঠিন হবে।

বর্তমানে দশ ধরনের গাড়ি চলাচল করছে। এগুলোর মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশার টোল ৩০ টাকা, কার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, চার চাকার মিনিবাস ও ট্রাক ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাক ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যান চলাচলে দিতে হচ্ছে ৪৫০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেভাবে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল পরে সেভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সিডিএর। ২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এ প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ছয়টি র‌্যাম্প বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য র‌্যাম্পের সংখ্যা ৯টিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে করে এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি কিছুটা কমেছে। বর্তমানে যে ৯টি র‌্যাম্প নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে তার মধ্যে শুধু একটি র‌্যাম্প নির্মিত হয়েছে। জিইসি মোড়ের গুরুত্বপূর্ণ র‌্যাম্পটি নানা প্রতিবন্ধকতায় সময়মতো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এই র‌্যাম্পটি না থাকায় লালখান বাজার, টাইগারপাস বা জিইসি মোড় থেকে ওঠার কোনো সুযোগ নেই।

বর্তমানে ব্যবহারকারীদেরকে মুরাদপুর অথবা ষোলশহর দুই নম্বর গেটের বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার হয়ে ওয়াসা মোড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল এলাকার মানুষকে র‌্যাম্পে উঠতে হলে উল্টো ঘুরে যানজট ঠেলে এগুতে হচ্ছে। ফলে বহু ব্যবহারকারী এত ঘোরাঘুরি না করে নিচের সড়ক কিংবা সাগরিকা হয়ে রিং রোড ধরে পতেঙ্গার দিকে যাচ্ছে। ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় কমে গেছে। জিইসি মোড়ের র‌্যাম্পটির নির্মাণকাজ চলছে। এটি চালু হলে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং আগ্রাবাদসহ অন্যান্য র‌্যাম্প চালু হলে গাড়ির সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীরা পতেঙ্গা প্রান্তে ওঠানামা করতে পারছেন। আর পতেঙ্গা থেকে উঠে কেবলমাত্র লালখান বাজারে নামার সুযোগ রয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা করছি। তবে নির্মাণাধীন র‌্যাম্পগুলো চালু হলে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরেছে ৮ হাজারের বেশি প্রাণ
পরবর্তী নিবন্ধসমুদ্রপথে মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা, ১৯৬ রোহিঙ্গা আটক