চট্টগ্রামে বহুল প্রত্যাশার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল চালু হচ্ছে আজ। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চমাশিহা ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। আজ রোববার সকাল ১০টায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এই হাসপাতাল উদ্বোধন করবেন। ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ বলেন, চট্টগ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে ক্যান্সার চিকিৎসার প্রথম পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল এটি। একটি নাগরিক উদ্যোগ থেকে এমন একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব হলো। তিনি বলেন, ১০ কাঠা জায়গা আমরা সরকারের কাছে পেয়েছি। মাননীয় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আমাদেরকে শুধু ভূমি দিয়েই নয়, আর্থিকভাবেও অনেক সহায়তা করেছেন। চট্টগ্রামের মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসায় এই হাসপাতাল যাতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেন।
তিনি বলেন, অগুনতি মানুষের দান–অনুদান এবং ভালোবাসায় হাসপাতালটি গড়ে উঠেছে। মানুষের সহায়তায় এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সত্যিই নাগরিক উদ্যোগের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই হাসপাতাল থেকে কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় ফিরে না যায়, টাকার অভাবে কারো চিকিৎসা যাতে মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায় সেদিকে সজাগ থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ সকাল ১০টায় হাসপাতাল উদ্বোধনের পাশাপাশি ১ কোটি টাকার উপরে অনুদান প্রদানকারী ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হবে। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখায় ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেককে প্রদান করা হবে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।
জানা যায়, চট্টগ্রামে ক্যান্সার চিকিৎসার অবস্থা বেহাল। সরকারি–বেসরকারি কোনো পর্যায়েই নেই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা। এই রোগের রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে অপারেশন এবং কেমোথেরাপির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। রেডিওথেরাপির অবস্থাও শোচনীয়। অবশেষে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসার সব ধরনের সুবিধা নিয়ে আজ চালু হতে যাচ্ছে ক্যান্সার হাসপাতালটি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে প্রতি বছর পঞ্চাশ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৩৬ জন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক মানুষ ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে গিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। মাসের পর মাস সিরিয়াল দিয়েও অপারেশন বা কেমোথেরাপি দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় না। কেমোথেরাপির অবস্থা মোটামুটি হলেও রেডিওথেরাপির সুযোগ প্রায় নেই। চট্টগ্রামে চমেক হাসপাতালে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারি কোনো হাসপাতালে এই ব্যবস্থা নেই। চমেক হাসপাতালে মাসের পর মাস ঘুরেও রেডিওথেরাপির সিরিয়াল পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময় রেডিওথেরাপির মেশিন কাজ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকায় রেডিওথেরাপির সুযোগ সীমিত। সরকারি হাসপাতালে সাত–আট মাস অপেক্ষা করার পর তারিখ পড়ে। অনেক রোগী রেডিওথেরাপির সুযোগ পায় না; তার আগেই মারা যায়। বিদ্যমান অবস্থায় বিত্তবানেরা দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিলেও সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয়।
সাধারণ মানুষ যাতে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা পায় সেই লক্ষ্য সামনে রেখে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। হাসপাতালের পাশে সরকার থেকে প্রাপ্ত ১০ কাঠা জমিতে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল (চমাশিহা) ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের দান–অনুদানে এই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেককে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় ১০১ সদস্যের ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটি। দেশে–বিদেশে মানুষের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করা হয়। প্রায় ৮০ হাজার বর্গফুটের ১০ তলা ভবনে রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার চিকিৎসার ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসার কার্যক্রম চলবে।
১০০ বেডের এই হাসপাতালে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া যাবে বলে জানালেন চমাশিহা ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. শেফাতুজ্জাহান। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন একশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাতে পারব। এর বাইরে আউটডোরে অনেক রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে পারব। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার মতো সুযোগ আমাদের রয়েছে। ক্যান্সারের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা এই হাসপাতাল থেকে দেওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।