অবশেষে চট্টগ্রামে আসছে বহুল প্রতীক্ষিত করোনা ভাইরাসের টিকা। আজ রোববার সকালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যানে করে বরাদ্দকৃত টিকা পৌঁছে দেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। সকাল ৭টার দিকে টিকা বহনকারী ভ্যান চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। সকাল ৭টার দিকে টিকা বহনকারী ভ্যান চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বলে তারা জানিয়েছেন। এসব টিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দেশে এরইমধ্যে করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে। শুরুতে রাজধানী ঢাকায় এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। আর ঢাকার বাইরে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সব ঠিক থাকলে মন্ত্রীর ঘোষিত সময়ে চট্টগ্রামেও করোনার টিকাদান শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
এদিকে, কয়েকদিন আগে জেলা ভিত্তিক করোনার টিকা বরাদ্দ দিয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কার্টন হিসেবে বরাদ্দ দেয়া তালিকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, প্রতি কার্টনে ১২০০ ভায়াল ভ্যাকসিন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের প্রতি ভায়ালে ১০টি ডোজ রয়েছে। সে হিসেবে প্রতি কার্টনে ১২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন থাকছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের জন্য ৩৮ কার্টন ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে অতিরিক্ত আরো ৪ কার্টনসহ মোট বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়েছে ৪২ কার্টন। ৪২ কার্টনে ৫০ হাজার ৪০০ ভায়াল হিসেবে মোট ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে চট্টগ্রাম।
যদিও প্রথম দফায় বরাদ্দের ৩৮ কার্টন (৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ) ভ্যাকসিনই পাঠানো হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের মাঝে এই টিকা প্রদান করা হবে।
ভ্যাকসিন গ্রহণে ৭ সদস্যের কমিটি : ঢাকা থেকে আসা ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য গঠন করা হয়েছে ৭ সদস্যের কমিটি। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ কমিটির সভাপতি। অন্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ইপিআই তত্ত্বাবধায়ক, ইপিআই কোল্ড চেইনের টেকনিশিয়ান, ওষুধ প্রশাসন এবং সিভিল সার্জন অফিসের একজন মেডিকেল অফিসারসহ মোট ৬ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে আজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
ভ্যাকসিন পরবর্তী জটিলতা পর্যবেক্ষণে ১৪ সদস্যের বিভাগীয় কমিটি : ভ্যাকসিন পরবর্তী জটিলতা পর্যবেক্ষণে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে চট্টগ্রামে। বিভাগীয় পর্যায়ে পোস্ট ভ্যাকসিন ইনফেকশন কন্ট্রোল নামে এ কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক। কো-চেয়ারম্যান হিসেবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন সিভিল সার্জন।
এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর ও সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণের পর গ্রহণকারীর শরীরে কোনো ধরনের জটিলতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করবে এ কমিটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শক্রমে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে ডব্লিউএইচও এর আয়োজনে দুই দিনের একটি ওয়ার্কশপেও অংশ নিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
নগরে টিকাদানে প্রস্তুতি : টিকাদানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকার সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে টিকাদান কেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নগরের ১৫টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আর এসব কেন্দ্রে টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। টিকাদানকারী হিসেবে ২ জন মিড ওয়াইফ, স্টাফ নার্স বা সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৪ জন স্বেচ্ছা সেবকের সমন্বয়ে প্রতিটি টিমে মোট ৬ জন সদস্য থাকবেন। এর মধ্যে কেন্দ্রভিত্তিক টিম প্রস্তুত ও তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তুতিও শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তবে কেন্দ্র সংখ্যায় সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে, রোববারের মধ্যে টিকা এলেও লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলে তবেই এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে।