কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সসহ ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম আজ বুধবার শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সে প্রথম ৫ জনের ওপর টিকার প্রয়োগ সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন। গতকাল মঙ্গলবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি দেখতে এসে সাংবাদিকদের এসব জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমেই দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেওয়া দেখবেন। মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রমও চালু হয়ে যাবে। খবর বিডিনিউজের।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথম যারা টিকা পাবেন তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ থাকবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে দেওয়া হবে। সরকার সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ সোমবার দেশে পৌঁছেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রথম চালানের টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর প্রয়োগ করে দেখা হবে। সব ঠিক থাকলে ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে সারা দেশে টিকাদান। সেজন্য হাতে থাকা ওই ৭০ লাখ টিকার বেশিরভাগ অংশ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারির কথা বলা হলেও আমরা ৭ তারিখেই সারা দেশে শুরু করার চিন্তা করছি। যারা এই টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ‘বিভ্রান্তিকর’ কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, টিকা আনা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এজন্য গত ৯ মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজেই করোনাভাইরাসের টিকা সরকারের কাছে কোনো রাজনীতি নয়। এটা মানুষের জীবনরক্ষা করতে আনা হয়েছে। যারা এই টিকা নিয়ে বিরূপ প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ভালো কাজ করছেন না। তারা এদেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করলে এটা নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চালাবেন না।
টিকা প্রয়োগের অনুমতি : ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম চালানে আসা অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামীকাল এই টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান।
বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘এঙক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেঙ্মিকো ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারকে এই টিকা সরবরাহ করছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি পাওয়ায় বেঙ্মিকো এখন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এই ভ্যাকসিন অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সেদেশে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। ভারতের সেই সব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।