প্রতি মিনিটে একজন আহত আসছে গাজার হাসপাতালে

ইসরায়েলি হামলায় নিহত বেড়ে ২ হাজার ৮০৮, আহত ১০৮৫৯ দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে মানবেতর পরিস্থিতি

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েলের হামলায় গাজার মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বর্তমানে গাজার হাসপাতালগুলোতে প্রতি মিনিটে একজন করে আহত রোগী আসছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। গাজার হাসপাতালগুলোতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার জ্বালানি রয়েছে। খান ইউনিস এলাকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ‘নাসের’ এ মিনিটে মিনিটে আহতদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসছে। হাসপাতালগুলোতে কোনো বিছানা খালি নেই। বাইরে টানানো হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাবারপানি ও বিদ্যুতের সংকট। এর মধ্যে ইসরায়েলি বোমা হামলার পর গাজার উত্তরাঞ্চলের অন্তত চারটি হাসপাতাল তাদের কার্যক্রম আর চালাতে পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আরও ২১টি হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে, হাসপাতাল থেকে এভাবে লোকজনকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।

নাসের হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ কানদিল জানান, স্রোতের বেগে রোগী আসছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড নেই। প্রতি মিনিটে একজন করে রোগী আসছে। এছাড়া তেল দিয়ে চালানো জেনারেটরও বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এক ভিডিওবার্তায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেইর আল বালাহের আলআকসা শহিদ হাসপাতালের ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ইয়াসির খাতাব বলেন, হাসপাতালে এত পরিমাণ লাশ আসছে যে এগুলো রাখার জায়গা হচ্ছে না। অনেক লাশ হাসপাতালেই পড়ে থাকছে।

গতকাল সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলহামাস সংঘাতে গাজায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৫৯ জন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ২৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ নারী ও শিশু। এর মধ্যে ৩৭ চিকিৎসা কর্মী, চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিকস রয়েছেন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। জবাবে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলে এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫০০ জন। ইসরায়েলহামাস সংঘাতে পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর হয়েছেন এক হাজার দুইশরও বেশি।

ইসরায়েল এখন গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেখানে পানি, বিদ্যুৎ ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ইসরায়েল গাজা সিটিসহ উত্তর দিকের বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়তে বলেছে। গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের ওপর দিয়ে যেন মানবেতর পরিস্থিতির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। শত সহস্র মানুষ গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে যে যা কিছু বহন করতে পেরেছে, তা নিয়ে এখানে পালিয়ে এসেছে। যাদের জ্বালানি আছে তারা গাড়ি করে এসেছে, যারা ঘোড়ার গাড়ি পেয়েছে সেটায় চড়ে এসেছে। আর যারা কিছুই পায়নি তারা নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটে এসেছে। এখানে এসে তারা যা দেখতে পেয়েছে তা হল, ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা একটি শহর। যে শহর রাতারাতি দ্বিগুণ পরিমাণ মানুষের ভার নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি রাস্তা নারীপুরুষ আর শিশুদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ইসরায়েল গাজা সিটির বাসিন্দাদের তাদের শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে লাখ লাখ মানুষ দক্ষিণের ওই শহরে পা বাড়ায়। হামাস বলছে, যে ১১ লাখ মানুষ গাজার উত্তরাঞ্চলকে নিজেদের আবাসস্থল বলে এতোদিন ধরে জেনে আসছে, তাদের মধ্যে চার লাখ মানুষ ৪৮ ঘণ্টায় সালাহ আলদিন রোড হয়ে দক্ষিণের দিকে গিয়েছে।

এদিকে রয়টার্সের এক জরিপ তেকে জানা গেছে, আমেরিকার বেশিরভাগ মানুষ ইসরায়েলকে সমর্থন করেন। নয় দিন আগে দেশটির উপর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর সে সমর্থন আরো বেড়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে বেশিরভাগ আমেরিকান চান গাজা থেকে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে সরে যেতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সহায়তা করুক। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চালানো দুই দিনের এই জরিপে অংশ নেওয়া ৭৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ‘গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ কোনো দেশে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সক্রিয়ভাবে কাজ করা উচিত’ বলে মনে করেন। ২২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এতে দ্বিমত পোষন করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা অবরোধ করলে শাপলা চত্বরের চেয়ে করুণ পরিণতি
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ আটক ১