কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে প্রতিদিন একটি লোকাল ট্রেন (স্পেশাল) এবং কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। তিনটি ট্রেন মাসে ২৫ দিন এই রুটে যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। তিনটি ট্রেনে সারা দেশের যাত্রীদের কক্সবাজার ভ্রমণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই টিকিটের জন্য যাত্রীদের মাঝে হাহাকার লেগে থাকে।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদেশি ঋণে নির্মিত এই রেলপথ চালু হলেও পর্যাপ্ত ট্রেন দিতে পারছে না রেলওয়ে। অথচ এখনই এই রুটে ট্রেন বাড়িয়ে রাজস্ব আয়ের সময় রেলওয়ের। কারণ এডিবির বিশাল ঋণ পরিশোধ করতে হবে রেলওয়েকে।
আইকনিক স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে প্রতি মাসে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মতো টিকিট বিক্রি হয়।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন তিনটি ট্রেন চলাচল করে। কক্সবাজার–চট্টগ্রাম–ঢাকা দুটি আন্তঃনগর ট্রেন এবং কক্সবাজার–চট্টগ্রাম রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন। তিনটি ট্রেনে প্রতিদিন ১৫ লাখ টাকার মতো টিকিট বিক্রি হয়। এই তিনটি ট্রেন মাসে ২৫ দিন চলাচল করে। মাসে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মতো টিকিট বিক্রি হয় কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে। টিকিটের জন্য যাত্রীদের চাহিদা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন টিকিটের চাপে হিমশিম খেতে হয়। যাত্রীদের চাহিদা সীমাহীন।
তিনি জানান, কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের পুরো প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফিনিশিং ওয়ার্কের কাজ চলছে। তাই এখনো সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা যাত্রীরা পাচ্ছে না। তবে শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এতে করে ট্রেনের গতি যেমন বাড়বে তেমনি যাত্রী সেবা থেকে শুরু করে বিশ্বমানের সব সুযোগ–সুবিধাসহ আইকনিক রেলস্টেশন চালু হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদেশি ঋণে নির্মিত এই রেলপথ চালু হলেও পর্যাপ্ত ট্রেন দিতে পারছে না রেলওয়ে। অথচ ট্রেন বাড়িয়ে এখনই রেলওয়ের এই রুটে রাজস্ব আয়ের সময়। কারণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। রেলওয়ের এই ব্যাপারে কোনো খেয়ালই নেই।
ওই কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ে বারবার বলছে, ইঞ্জিন সংকট। এত বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই ভাবা উচিত ছিল রেললাইন নির্মাণের পর পর্যাপ্ত ট্রেন চালুর বিষয়টি। যারা প্রকল্পের সাথে জড়িত তাদের কারো মাথায় ছিল না বিষয়টি। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হওয়ার পর সারা দেশের পর্যটকদের প্রধান আর্কষণে পরিণত হয়েছে ট্রেনে করে কক্সবাজার ভ্রমণ। কিন্তু যাত্রী চাহিদার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারছে না রেলওয়ে।
নানা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শেষ। ১১ নভেম্বর এ রেলপথ উদ্বোধন করা হয়। ১ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। প্রথমে কক্সবাজার এক্সপ্রেস যাত্রা করলেও যাত্রী চাহিদা বেশি থাকায় বাড়ানো হয় পর্যটক এক্সপ্রেস নামে আরো একটি ট্রেন। তারপরও যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না ট্রেনের টিকিট। প্রতিনিয়ত ঢাকা–কক্সবাজার রুটে বাড়ছে যাত্রী, যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে প্রায় ১০ মাস। কিন্তু এখানো বিশ্বমানের নান্দনিক আইকনিক রেলস্টেশনের পূর্ণাঙ্গ সুযোগ–সুবিধা চালু না হওয়ায় যাত্রীরা হতাশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা কক্সবাজার গিয়ে আইকনিক রেলস্টেশন দেখে অবাক। এই স্টেশনে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, লকার, শপিংমল, রেস্তোরাঁ, তারকামানের হোটেল, মসজিদ ও চলন্ত সিঁড়িসহ রয়েছে বিশ্বমানের সুযোগ–সুবিধা। কিন্তু ট্রেন চলাচলের ১০ মাস পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি এসব সুযোগ–সুবিধা। শুধুমাত্র একটি কক্ষে কাউন্টার চালু করে কোনো রকম চলছে টিকিট বিক্রি।