‘প্রতিহিংসায়’ বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না খালেদাকে, দাবি ফখরুলের

| সোমবার , ২৪ জুন, ২০২৪ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

সরকারপ্রধানের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় গতকাল রোববার সকালে নয়া পল্টনে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সেই প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। খবর বিডিনিউজের। শুক্রবার গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন আছেন বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। গত চার বছরে বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে তার পরিবারের আবেদনে সরকার নির্বাহী আদেশে দুই শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। শর্ত হল, তাকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও ওই শর্তের যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করেছে সরকার। সে প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বার বার বলেছে, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) যে অসুখ, সেই অসুখের চিকিৎসা এখানে (বাংলাদেশে) করা সম্ভব নয়। তার যে বিভিন্ন রোগ আছে, তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হসপিটাল প্রয়োজনবার বার এ কথাগুলো বিভিন্নভাবে বলার পরেওদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ বলেছে, এমনকি বিদেশি মিশনগুলো এখানে (বাংলাদেশে) আছে তারাও বার বার বলেছে, বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলেছে।

কারাগারে চিকিৎসা পাননি: মির্জা ফখরুল বলেন, এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার, তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিনি (খালেদা জিয়া) দীর্ঘকাল ধরে কারারুদ্ধ রয়েছেন। আপনারা সবাই জানেন, শুধু এইটুকু বলতে চাই, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে আছেন, বন্দি আছেন।

আমরা এও জানি যে, তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় কারাগার থেকেই অসুস্থ হয়েছেন। তার সেখানে কোনো চিকিৎসা হয়নি। তিনি বার বার কমপ্লেইন করেছেন, কিন্তু সরকার তা শোনেনি, তার চিকিৎসাও দেয়নি। পরবর্তীকালে তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে, সেখানেও তার কোনো সুচিকিৎসা হয়নি। বাসায় (গুলশানের ফিরোজা) আসার পরে তাকে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।

জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে: বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার জীবন মৃত্যু এতই সন্ধিক্ষণে, আমি আপনাদেরকে বলছি, আপনারা প্রাণখুলে তার জন্য দোয়া করুন। শুধু দোয়াই নয়, আমাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তার সুচিকিৎসা করার জন্য, সেই চেষ্টাই আমাদেরকে করতে হবে। দেশনেত্রীর জন্য যা করার দরকার সেটাই আমাদেরকে করতে হবে। আসুন পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে এই দোয়া চাই, আল্লাহতালা যেন আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক, যিনি আমাদেরকে স্বৈরাচারের কাছ থেকে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যিনি এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন, যিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানে সংযোজন করে এদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন, যিনি এদেশকে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করেছিলেন, যে কারণে তখন বিদেশের পত্রিকাগুলোতে লেখা হত ‘বাংলাদেশ ইজ আ ইমার্জিং টাইগার’, কি দুর্ভাগ্য আমাদের, সেই নেত্রী আজকে বিনা চিকিৎসায় বন্দি অবস্থায় মৃত্যুশয্যায়।

আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের বলেন, আসুন আমরা আজকে কায়মনো বাক্যে দোয়া করিআল্লাহতালা যেন আমাদের দোয়া শোনেনআল্লাহতালা যেন তাকে (খালেদা জিয়া) আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার জেগে উঠতে পারি এবং এই যে দানব, যারা আমাদের রাষ্ট্রের সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাকে যেন আমরা পরাজিত করতে পারি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের আরোগ্য কামনায় বিএনপি রোববার ঢাকাসহ সকল মহানগর ও জেলায় এরকম দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। নয়া পল্টনের দোয়া মাহফিলে মোনাজাত করেন উলামা দলের সাবেক আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্র্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ কয়েকশ কর্মীসমর্থক দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেনানিবাস না থাকলে কক্সবাজার দখল করত আরাকান আর্মি
পরবর্তী নিবন্ধক্রমশ ধীর হচ্ছে পৃথিবীর গতি, দীর্ঘ হচ্ছে দিন