প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি। চসিক নির্বাচনে প্রতিদিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের সামনে স্বপ্নকল্প রচনায় কম যান না কেউ। সবাই জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। প্রত্যেকের একই কথা, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমিই জিতব’। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ঘোড়া ছুটছে দ্রুত বেগে। তবে নগরবাসীর প্রশ্ন, এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হবে কতটা? আর কতটাই বা মনে রাখবেন প্রার্থীরা?
আর মাত্র ৩ দিন পর চসিক নির্বাচন। এরপর নির্ধারিত হয়ে যাবে নগরবাসী তাদের সুখে-দুঃখে কাদের বিশ্বস্ত মনে করেছেন; কাকেই বা অভিভাবক মেনেছেন।
বর্তমানে প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেখা যাচ্ছে, দলীয় মেয়র প্রার্থীরা সকলেই নগরীর জলাবদ্ধতা, যানজট, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সমস্যা তো বটেই-সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে চলেছেন। নগরবাসীর অভিযোগ, যারা মেয়র বা নগরপিতা হতে চান, নগরীকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজানোর একটা অভিলাষ তাদের মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু যা তাদের আওতাভুক্ত নয়, সে বিষয়েও ঢালাও প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ভাবনায় পড়েছে আমজনতা।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হলে চট্টগ্রামকে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তার নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে ৩৭ দফা। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ঘোষণা করেছেন ৭৫ দফা ইশতেহার।
এদিকে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুসারে সিটি করপোরেশনের মূল কাজ নগর পরিস্কার রাখা, রাস্তাঘাট ঠিক রেখে আলোকায়নের ব্যবস্থা করা ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা দেওয়া। করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাজের মধ্যে রয়েছে নতুন হোল্ডিং নম্বর দেওয়া ও ট্যাক্স নেওয়া, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে রেজিস্ট্রি, রাস্তা খননের অনুমতি, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা, রাস্তা-নর্দমা-ফুটপাত তৈরি, বহুতল ভবনের জন্য অনাপত্তি পত্র দেওয়া, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট বসানো এবং পার্ক ও খেলার মাঠ বিষয়ক সেবা দেওয়া।
নগরীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা তানজিল শরীফ বলেন, প্রতিবারই প্রার্থীরা নির্বাচনী মেনিফেস্টো ঘোষণা করেন। তবে প্রতিশ্রুতির বহর দেখে যে কেউ ভাবতে পারেন যে, সবচেয়ে দুর্বল প্রার্থীও যদি জিতে যান, তাহলে শহরে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও রাস্তার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
রিকশাচালক ইলাহি বক্স বলেন, নেতাগো কথা আর কামে মিল থাহে না। তাগো মুহে এক কথা আর কাজে অইন্য। তাহলে কেন ভোট দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটার আইডি কার্ড যেহেতু করা অইছে, তাই ভোট দিই। এবার প্রার্থীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি? জানতে চাইলে ইলাহি বক্স বলেন, তাগো কথা ও কামের মিল থাহিলেই আমি খুশি।
সিনেমা প্যালেস মোড়ের এক চা দোকানদার বলেন, আমরা ভোট দেই উন্নয়নের জন্য। কিন্তু যত আশা করি তত হয় না। তাহলে কেন ভোট দেন-এই প্রশ্নের জবাবে ঝরে পড়ল হতাশা। বললেন, ভোট দিয়া কি লাভ? অনেকে ভোটের আগে বাড়ি বাড়ি ঘুইরা অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু নির্বাচনের পর তাদের আর কোনো খোঁজ থাকে না।
রেল স্টেশন এলাকার সিএনজি টেক্সি চালক আবদুল আওয়ালের কাছে প্রার্থীদের কাছে তার প্রত্যাশা কি- জানতে চাইলে বলেন, নির্বাচন হয়া গেলে তারা আর চেনে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. ফাহিম বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থা এগিয়ে নিতে ভোট দিই। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন এটাই কাম্য।