এক টেলিফোন আলাপের অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পর বিতর্কের মধ্যে পদ গেল তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করার জন্য, এ বিষয়টা আমি যাতে জানিয়ে দিই। রাত ৮টার দিকে আমি তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি জানিয়ে দিয়েছি।’ খবর বিডিনিউজের।
চিকিৎসাশাস্ত্রের ডিগ্রিধারী মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) আসন থেকে প্রথমবার সংসদে যান নবম সংসদে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে দ্বিতীয়বার জয়ী হওয়ার পর তাকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এ দফায় সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে মুরাদকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ২০০০ সালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি হন মুরাদ হাসান। তিন বছর পর আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান। ৪৭ বছর বয়সী মুরাদ তার নিজের এলাকা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক’। তার বাবা অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য সমপ্রতি মুরাদ হাসানের পদত্যাগের দাবি তোলে বিএনপি। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই একটি টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি, মুরাদ হাসান, যদিও এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল দুপুরে এক অনুষ্ঠানে মুরাদ হাসানের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘শুনেছি সে না কি একসময় ছাত্রদল করত। দুঃখের কথা, দুর্ভাগ্যের কথা। আগে সে ছাত্রদল করতো। সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রচার সম্পাদক ছিল। পরবর্তীকালে সে ছাত্রলীগে জয়েন করেছে। ধিক্কার দিই আমি তাকে। শেইম।’ ফখরুলের ওই দাবি এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সাংসদ মুরাদ হাসানকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
বিডিনিউজের আরেক খবরে বলা হয়, খালেদা জিয়ার নাতনী জাইমা রহমানকে নিয়ে ‘অশ্লীল ও কুরুচিকর’ বক্তব্যের জন্য তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল। দুই দিনের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিএনপির এই আইনজীবী নেতা। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকি দেন কাজল। সংবাদ সম্মেলনে কাজল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদ হাসান বিভিন্ন ব্যক্তি, বিশেষ করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সম্পর্কে যথাবিহিত আচরণ করার ক্ষেত্রে মন্ত্রী হিসেবে তিনি যে সাংবিধানিক শপথ গ্রহণ করেছেন, তা লঙ্ঘন করে চলেছেন। জাতি হিসেবে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে ডা. মুরাদ হাসান যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে জাতির সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’