মো. ইউসুফ ওরফে ইলিয়াছ (৩২) একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। ২০০৫ সাল থেকে নগরীতে ছিনতাই করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে নগরী ও জেলার ৮টি থানায় রয়েছে ২২টি মামলা। তন্মধ্যে ৫টি অস্ত্র মামলা, চুরি, ছিনতাই, মারামারি, নারী নির্যাতন এবং দ্রুত বিচার আইনের মামলা। প্রত্যেকবারই গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইয়ে।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল পর্যন্ত হামকা নুর আলম গ্রুপের সদস্য ছিলেন ইলিয়াছ। এর আগে হামকা গ্রুপের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়ে পরিচয় হয় টানা পার্টির সদস্যদের সাথে। ২০১৪ সালে জামিনে বেরিয়ে জড়িয়ে পড়েন রিকশায় কৌশলে ব্যাগ টানা ছিনতাইয়ে। ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খুলশীতে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জুলিয়া ডেভিসের ব্যাগ ছিনতাই করেন ইলিয়াছ। ওইদিন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বামহাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। সেবার প্রাণে বেঁচে কারাগারে গেলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও শুরু করেন ছিনতাইয়ে। পরের বছর ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামীতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। প্রতিবার কারাগারে গিয়ে সংগ্রহ করেন নতুন নতুন সদস্য। পরে জামিনে বেরিয়েই ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ ছিনতাইয়ে বিশেষ কায়দা নেন ইলিয়াছ। রিকশার মহিলা যাত্রীদের টার্গেট করে দ্রুতগামী সিএনজিতে চড়ে ব্যাগ ছিনতাই শুরু করেন। সিএনজি চালিত অটোরিকশায় গতি বাড়ানোর জন্য গ্যাসের পরিবর্তে পেট্রোল ব্যবহার করেন। পুলিশ কিংবা কেউ ধাওয়া করলে যাতে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া যায়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টায় বায়েজিদ বোস্তামী বিএসআরএম মোড়ে অন্য সিএনজিতে থাকা এক ব্যক্তির ব্যাগ টান দিলে ভুক্তভোগীর চিৎকারে ঘটনাস্থলের কাছে থাকা পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শেরশাহ মিটার মোড় এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ইউসুফ ওরফে ইলিয়াছকে সুমন মিয়া (২৭) নামের আরেক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে। ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়। এসময় তাদের ব্যবহৃত সিএনজি থেকে দুইটি লম্বা কিরিচ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ছিনতাইকারী ইলিয়াছ বোয়ালখালী থানাধীন পূর্ব চরণদ্বীপ গ্রামের মো. ইসমাইলের ছেলে। বর্তমানে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন কামাল বাজার এয়াকুব কলোনিতে ভাড়া ঘরে বসবাস করছেন। অন্যদিকে সুমন মিয়া হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন কাঠান বাড়ির মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জারটেক এলাকায় বসবাস করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। ছিনতাই ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বায়েজিদ থানার এসআই আজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মো. ইউসুফ ওরফে ইলিয়াছ একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। এই পর্যন্ত ৬-৭ বার গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রতিবার কারাগারে গিয়ে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করে। পরে জামিনে বেরিয়ে আবারো জড়িয়ে পড়ে ছিনতাইয়ে। তার বিরুদ্ধে নগরীর বেশ কয়েকটি থানায় ২২টি মামলা রয়েছে।’
ওসি বলেন, বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে আবার ছিনতাই করতে গেলে তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে দুইটি ধারালো লম্বা কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।