চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ড. আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুরাও আমাদেরই সন্তান। তাদের অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তাদের চলাচলের পথ সুগম ও সুন্দর করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তাদের চলাচলের জন্য আলাদা র্যাম্পের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আলাদা উন্মুক্ত উদ্যান, খেলাধুলার মাঠ ও আলাদা শিশু পার্কের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উদ্যোগে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে জায়গার বড় অভাব। এর মাঝেও আমাদেরকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উন্মুক্ত স্থান এবং সবুজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য খেলাধুলা এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি শহরের সার্কিট হাউজের সামনের পার্কটি উচ্ছেদের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, স্থানটিকে আমরা উন্মুক্ত করে শহরের সর্বস্তরের বাসিন্দাদের শ্বাস নেয়ার জায়গায় পরিণত করবো।
হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ও অটিজম ও শিশু বিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক ডা. মাহমুদ আহমেদ চৌধুরী আরজুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক এবং চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডা. মইনুল ইসলাম মাহমুদ। হাসপাতালের লেকচার গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার ও তাদের সুযোগ–সুবিধার বিষয়ে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পক্ষ থেকে আপনারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আপনাদের এই কাজে আমরাও সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে যাব। তিনি বলেন, আমার সহধর্মিনীও প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। তিনিও আপনাদের হাসপাতালে আসবেন এবং আপনাদের সাথে কাজ করবেন। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য আমরা জায়গার ব্যবস্থা করে দিয়েছি এবং প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ দেয়ার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। ওদের বেড়ে উঠার জন্য আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে, ওদের ভালো থাকার জন্য কাজ করতে হবে। ওরাও তো আমাদের পরিবারেরই একজন। মা ও শিশু হাসপাতালের প্রকল্প অটিজম ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার দেখে খুবই ভালো লেগেছে যে আপনাদের এখানে শিশু বিকাশ কেন্দ্রে একই ছাদের নিচে সব ধরনের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। আসুন আমরা সবাই তাদের জন্য কিছু করি, তাদের মুখে হাসি ফোটাই। তিনি সামনের দিনগুলোতেও এই অটিজম কেন্দ্র তথা মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. মইনুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, মা ও শিশু হাসপাতাল সারা দেশে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত। হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাসপাতালটি আজ বিশাল এক মহিরুহে পরিণত হয়েছে। তিনি হাসপাতালের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ। অনুষ্ঠানে হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি (ডোনার) সৈয়দ আজিজ নাজিমউদ্দিন, জয়েন্ট ট্রেজারার এস এম কুতুব উদ্দিন, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাগির, ডোনার সদস্য মো. শহীদ উল্লাহ, সদস্য মো. হারুন ইউসুফ, ডা. ফজল করিম বাবুল, চমাশিহা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর এ এস এম মোস্তাক আহমেদ, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক, ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. অসীম কুমার বড়ুয়া, উপ–পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, উপ–পরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) ডা. এ কে এম আশরাফুল করিম, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক–শিক্ষিকা, চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়। প্রতিবন্ধী রোগীদের চিকিৎসা সেবার বিষয়ে বিশেষ মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রেহানা আহমেদ।