আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করে এবার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ, বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ’। প্রতিবন্ধী মানুষের রয়েছে নানা রকম প্রকারভেদ। শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এমনকি বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে বয়স, লিঙ্গ, জাতি, সংস্কৃতি বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী এই মানুষগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে জীবনযুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জীবনকে পরিচালনা করছে। প্রতিবন্ধী মানুষদের অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি যত্নের প্রয়োজন পড়ে। তারা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ তাদের নিয়ে অনেকেরই বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা থাকে। সেই ভ্রান্ত ধারণা কাটাতেই তাদের জন্য একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হয়।
প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেছেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নানামুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অটিজম ও এনডিডি শিশুদের জাতীয় জীবনের মূলধারায় নিয়ে আসা সম্ভব। প্রতিবন্ধী শিশুর বাবা–মা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত থাকেন। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে তিনি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপের সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমান প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ ২১ হাজার ৬০৬ জন। এরমধ্যে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৭ জন পুরুষ, ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯১১ জন নারী ও ২ হাজার ৯০৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন। প্রতিবন্ধিতার ধরন বিবেচনায় অটিজম ৯০ হাজার ৪০৮ জন। শারীরিক প্রতিবন্ধী ১৮ লাখ ২৯ হাজার ১১৭ জন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ও অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধী ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৪ লাখ ৭২ হাজার ৫০৫ জন , বাক প্রতিবন্ধী ২ লাখ ৮৮২ জন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ২ লাখ ২৯ হাজার ৮ জন, শ্রবণ প্রতিবন্ধী ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৭ জন, সেরিব্রাল পালসি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৯ জন, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৭ জন, ডাউন সিনড্রোম ৭ হাজার ১০৩ জন ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৮৭ জনকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান এবং অটিজম ও শিশু বিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদ এ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত ২৬ বছর ধরে আমাদের হাসপাতালে অটিজম এবং শিশু বিকাশ কেন্দ্রের রোগীদের বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছি। এই দীর্ঘ সময় আমরা এই বৃহত্তর চট্টগ্রামের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ৫ লাখেরও অধিক শিশুকে চিকিৎসার পাশাপাশি সাইকোথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, ফিজিওথেরাপি এবং পুষ্টিজনিত সমস্যার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই এই দিবসটির সূচনা।