আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬২/১২৭ সিদ্ধান্ত প্রস্তাব অনুসারে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় এবং ৩রা ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ঘোষণা হয়। এ ঘোষণায় সকল সদস্য দেশকে ২০০৬ সালে ঘোষিত প্রতিবন্ধী অধিকার কনভেনশন অনুমোদন করার আহ্বান জানানো হয়। এর আগে সর্ব প্রথম ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী দশক (১৯৮৩–১৯৯২) শেষে সাধারণ পরিষদে ৪৭/৩ নম্বঃ সিদ্ধান্ত প্রস্তাব অনুসারে প্রতিবন্ধী দিবসের প্রস্তাব করা হয়। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা তৈরি এবং এদের অবস্থার উন্নয়নে সমাজের সকল ক্ষেত্রে সমান সুযোগপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করা। ৪৭/৮৮ নম্বর সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে প্রতিবন্ধীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে দিবসটি পালনের সাথে সম্পৃক্ত করতে আহ্বান জানায়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার ৮ শতাংশ, যাদের ৮০ শতাংশ বাস করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, এ রকম ৫ কোটি মানুষ শারীরিক, মানসিক বা ইন্দ্রিয়গত প্রতিবন্ধিত্বের শিকার।
প্রতিবন্ধী মানুষদের অনেক সময় সমাজের মূলধারা থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিবন্ধিত্বের অনুধাবন ও ধারণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মূল্যবোধের পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে এ সম্পর্কে উপলব্ধি বৃদ্ধি। প্রতিবন্ধিত্ব রয়েছে, এমন মানুষের মর্যাদার ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন ও তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চেষ্টা করছে। প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণ ও অধিকারের জন্য জাতিসংঘের উদ্বেগের মূল প্রোথিত রয়েছে সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালায়, যার ভিত্তি রয়েছে মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও সকল মানুষের সমতা। তাঁরা বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারের বিষয়টি সরকার বা নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকারের তালিকায় পিছিয়ে থাকে। কর্মসংস্থানসহ নানাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ইস্যু বা বিষয়টি মূলধারায় গুরুত্ব পায়নি। এক্ষেত্রে বলতে হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শুধু চাকরি দিলেই চলবে না, তাদের চাকরিক্ষেত্রে ধরে রাখতে হলে ঐ ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রকে ঢেলে সাজানো, বিভিন্ন আইন ও নীতির বাস্তবায়ন এবং প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেওয়াকে দায় হিসেবে না দেখে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপ বাড়াতে হবে। অনেকের ধারণা, একটি র্যাম্প বানিয়ে দিলেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চাহিদা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আসলে তা নয়। প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে নানা বৈচিত্র্য আছে, এমনকি শহুরে আর গ্রামীণ প্রতিবন্ধী নারী যে সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছেন, তা এক নয়। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।