প্রতিদিন ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাবে কাফকো

যুগান্তকারী চুক্তি : বাড়বে সার উৎপাদন, কৃষিখাতে বড় ভূমিকার প্রত্যাশা

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর সঙ্গে কাফকো কর্তৃপক্ষের এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে কাফকো কর্তৃপক্ষ সার উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে প্রাকৃতিক গ্যাস পাবে। এতে বৃদ্ধি পাবে সারের উৎপাদন। যা দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানায়, আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত বহুজাতিক সারকারখানা কাফকো চালু রাখতে দৈনিক কমপক্ষে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ থাকলে কাফকোতে দৈনিক ২ হাজার মেট্রিক থেকে ১৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হয়। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে বার বার ব্যাহত হচ্ছিল কাফকোর উৎপাদন। অবশেষে গ্যাস সরবরাহের অনিশ্চয়তা থেকে বেরিয়ে আসল কাফকো। গতকাল বুধবার ঢাকার পেট্রোবাংলায় স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে কাফকোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী কেজিডিসিএল কাফকোকে গড়ে দৈনিক ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করবে। এই বিপুল পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ কাফকোর সার উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কেজিডিসিএল’র পক্ষে কোম্পানির সচিব কবির উদ্দিন আহম্মদ এবং কাফকোর পক্ষে সিসিও ও কোম্পানি সচিব খাজা সাইদুর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, কেজিডিসিএলএর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান, বিসিআইসি চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান এবং কেজিডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, কাফকো এবং পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে কাফকোর গ্যাসের বকেয়া বিলবাবদ প্রায় ৯২৪ কোটি টাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে (কেজিডিসিএল) পরিশোধ করেছে। একইসঙ্গে বিতরণ কোম্পানিটির সঙ্গে আগামী ২০২৮ সাল পর্যন্ত নতুন গ্যাস ক্রয় চুক্তি সই করে। বকেয়া গ্যাস বিলের একটি চেক শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান কেজিডিসিএলএর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ হাতে তুলে দেন। এছাড়া ডিমান্ড চার্জ বাবদ ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার আরো একটি চেক তুলে দেয়া হয়।

বর্তমানে দেশে সারের চাহিদা প্রায় ৬৯ লাখ টন। এর মধ্যে, ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৭ লাখ টন। সারের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। দেশে মোট রাসায়নিক সারের ৭০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহৃত হয় শুধু বোরো ও রবি মৌসুমে। এবার গ্যাস সংকটের পাশাপাশি ডলারের বাড়তি রেটের কারণে এবার নির্দিষ্ট দামে সার পাওয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিসিআইসির সারকারখানাগুলো থেকে প্রায় ৭ লাখ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। বাকী সার যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) থেকে কেনা ও আমদানির মাধ্যমে যোগান দেওয়া হয়। গ্যাস সরবরাহ নিয়ে সংকট কেটে যাওয়ায় সারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে আর কোনো শঙ্কা থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার সতর্কতা বাংলাদেশ ব্যাংকের
পরবর্তী নিবন্ধএকাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু