প্রতিকার চাওয়া ব্যক্তিই মামলায় প্রধান আসামি

মৃতের স্বাক্ষর জাল করে সার উত্তোলন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে ১০ বছর ধরে সার উত্তোলন করার ঘটনায় প্রতিকার চাওয়া ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করে গতকাল ফটিকছড়ি থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। থানা কৃষি কর্মকর্তা লিটন দেবনাথ বাদী হয়ে মামলাটি রুজু করেন। এতে ঘটনার মূল হোতাদের বাঁচানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে দশ বছর ধরে কোটি কোটি টাকার সার উত্তোলন এবং উত্তোলিত সারের একটি বড় অংশ মায়ানমারে পাচার করা হয়েছে মর্মে দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের পরই প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। সারের ডিলার এম এ সবুর এন্ড ব্রাদার্সের মালিক আলহাজ্ব আবদুল ছবুর মারা যান ২০১১ সালে। কিন্তু আবদুল ছবুরের স্বাক্ষর জাল করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র গত দশ বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কারখানাগুলো থেকে সার উত্তোলন করে। ফটিকছড়ির বক্তপুর ইউনিয়নের ডিলার হিসেবে এই লাইসেন্সের আওতায় সার তোলা হলেও আবদুল ছবুরের পরিবার পরিজন কিছুই জানেন না বলে দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবদুল ছবুরের পুত্র মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাবরে পত্র দিয়ে ঘটনার উল্লেখ করে প্রতিকার চেয়েছিলেন। পটিয়া থানা সদরে প্লাস্টিক ক্রোকারিজের ব্যবসা করা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া সার ব্যবসার সাথেই জড়িত নন। তার বড় ভাইও মারা গেছেন। অথচ ফটিকছড়ির বক্তপুর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ডিলার হিসেবে তার পিতার লাইসেন্সে বছরের পর বছর সার উত্তোলন এবং বিক্রি হয়েছে। ফটিকছড়ির ডিলার হলেও আবদুল ছবুর পটিয়ার ভাটিখাইন গ্রামের মৃত কালা মিয়ার পুত্র। বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) তালিকাভুক্ত সার ডিলার হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সার কারখানাগুলো থেকে প্রতি মাসে গড়ে ১০ টন পর্যন্ত সার উত্তোলনের রেকর্ড রয়েছে এই লাইসেন্সের বিপরীতে। একটি লাইসেন্সের বিপরীতে এক বছরে অন্তত এক কোটি টাকার সার উত্তোলন এবং বিক্রি হলেও মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া পটিয়া থানা সদরের প্যারাগন ক্রোকারিজ নামের একটি দোকানের ক্ষুদে ব্যবসায়ী।
বিভিন্ন সংস্থা বরাবরে লিখিত অভিযোগে মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া উল্লেখ করেন, তার পিতা আলহাজ্ব আবদুল ছবুর গত ২০১১ সালের ১৮ মার্চ মারা যান। কিন্তু তিনি যে মাসে মারা গেছেন ওই মাস থেকে শুরু করে গত দশ বছর ধরে প্রতি মাসেই তার স্বাক্ষর জাল করে সার উত্তোলন করা হয়েছে। সার উত্তোলন করে তা এলাকায় বিক্রির ব্যাপারে সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের দেখভালের নিয়ম থাকলেও সব কাগজপত্রই গত দশ বছর ধরে স্বাক্ষরিত হয়েছে। আলহাজ্ব আবদুল ছবুর মারা গেলেও তার নামের লাইসেন্সে তার স্বাক্ষর জাল করে তাকে দিয়ে অপরের স্বাক্ষর সত্যায়িত করিয়ে নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকার সার উত্তোলন করা হয়েছে।
মরহুম আলহাজ্ব আবদুল ছবুরের পুত্র ইসহাক মিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বরাবরে দেয়া পত্রে আবু শাহাদাত, মোহাম্মদ আজগর বৈদ্য এবং মনির আহমদ নামের তিন ব্যক্তির নামোল্লেখ করে তাদেরকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেন। ইসহাক মিয়া লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন, তিনি আবু শাহাদাতের কাছে গেলে মৃত ব্যক্তির লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায় বলে তাকে বিভ্রান্ত করেন। ফলে তিনি অন্য ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। অথচ তার পিতার লাইসেন্সের বিপরীতে প্রতি বছরই কোটি টাকার সারের ব্যবসা হয়েছে। মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া চট্টগ্রামের সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক, ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফটিকছড়ির কৃষি কর্মকর্তাকেও পত্র দিয়েছেন। তিনি তার পিতার স্বাক্ষর জাল করে সার উত্তোলন এবং তা বিদেশে পাচার করে দেশের ক্ষতিসাধন করার সাথে জড়িত তিন ব্যক্তির বিচার দাবি করেছেন।
অথচ গতকাল ফটিকছড়ি থানায় এই মোহাম্মদ ইসহাক মিয়াকেই প্রধান আসামি করে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। একই মামলায় এম এ সবুর এন্ড ব্রাদার্সের ম্যানেজার আলী আজগর এবং ফটিকছড়ির নানুপুরের সার ব্যবসায়ী হারুন স্টোরের মালিক মোহাম্মদ হারুনকে আসামি করা হয়েছে। ফটিকছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আকতার মামলাটি তদন্ত করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিকার চাওয়া ব্যক্তিকেই মামলার প্রধান আসামি করার ব্যাপারে মামলার বাদী গতকাল ফটিকছড়ি থানা কৃষি কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ফটিকছড়ি থানা পুলিশ মামলা রেকর্ডের কথা স্বীকার করে জানায় বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রকৃত অপরাধীরা যাতে পার না পায় তা নিশ্চিত করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোজ্য তেলের দাম লিটারে ২ টাকা কমছে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম ওয়াসায় ১৩ জনের পদোন্নতি