আজ ৮ সেপ্টেম্বর ক্ষণজন্মা মানুষটির না ফেরার চার বছর! শিক্ষক, কবি প্রণয় কান্তি ছিলেন কালসচেতন স্বপ্নদ্রষ্টা উদার বিজ্ঞানমনস্ক একজন মানুষ। লড়াই ছিল তাঁর সকল বৈরিতার বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ১৬ বছর কোলন ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করে ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। সৃজনশীল মানুষটি তাঁর বহু প্রকাশিত অপ্রকাশিত সৃষ্টি রেখে গেছেন। রেখে গেছেন অসংখ্য গুণগ্রাহী ছাত্র ছাত্রী। তাঁর প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ ‘বুদ্ধির মুক্তি ও বেদনা মাধুরী’ (শুদ্ধস্বর), ‘আকাশ লীনার সাথে কিছুক্ষণ’(শুদ্ধস্বর),‘অতঃপর মেঘের কাছে’ (দেশ পাবলিকেশন্স), প্রবচনের বই ‘প্রবচন ও প্রদীপন'(খড়িমাটি)। প্রণয় কান্তি এক সত্য-সুন্দরের প্রত্যাশী ছিলেন। ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়নের সুবাদে পাশ্চাত্যের চিন্তা-দর্শন-সাহিত্য প্রভৃতির বিস্তর পাঠের অবকাশ তাঁর হয়। অথচ পাশ্চাত্যের এই আলোকাবগাহন তাঁকে উন্মার্গ করে নি। তাঁর সমস্ত ভাবনার কেন্দ্রে ছিলো স্বদেশ-স্বজাতির কল্যাণচেতনা। মূলত বিজ্ঞানচেতন গদ্য এবং কবিতা এই দুই ডানায় ভর করে পথ কাটতে চেয়েছিলেন প্রণয় কান্তি। তাঁর গদ্যও ছিল রুদ্ধতাকে লক্ষ করে ছোঁড়া পার্থ-তীর। বৈরিতার প্রেক্ষাপটে অনেককেই আমরা দেখেছি রূপক-প্রতীকের আড়ালে ভাষ্য রচনা করতে। কিন্তু প্রণয় কান্তি বক্তব্য-প্রকাশে ছিলেন দৃঢ় ও সাহসী। যুক্তি তাঁর প্রাথমিক হাতিয়ার। আসলে যাকে তিনি বুদ্ধি বলতে চান সেটা হচ্ছে যুক্তি আর কে না জানে যুক্তির নেপথ্যে থাকে বিজ্ঞানের শক্তি। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাত প্রণয় কান্তির মন ও মননে প্রকৃত অধিবাস ছিল বৈজ্ঞানিক জিগীষার। ফলে তিনি প্রবলভাবে ইহজাগতিক। তাঁর কবিতায়ও তাঁর সেই ইহজাগতিকতাকে অনুভব করা যাবে। প্রণয় কান্তির অনেকগুলো কবিতায় দেখা যায় যেখানে পুরুষ আর মানুষের মধ্যে চলে দ্বৈরথ। বস্তুত তাঁর নিজের ভেতরকার পুরুষ-সত্তার উপলব্ধি থেকে তিনি চলে যান অন্য এক উপলব্ধির দিকে, যে জায়গাটাতে ‘অপর’ সত্তার জন্য সংরক্ষিত থাকে খানিকটা জমিন। যে পুরুষের বিসর্জন তাঁর চিন্তা ও দর্শনের একটি কেন্দ্রীয় বিষয়। কবির পুরুষ-ভাবনা কখনো-কখনো পৌঁছায় এক উত্তুঙ্গ অবস্থানে যেখানে কবি নিজেকে কল্পনা করেন অপৌরুষেয় সত্তায়। প্রণয় কান্তির আরাধ্য নারী অবশ্যই বৈপ্লবিক, পুরুষের সমান্তরাল সহযাত্রী। ২০১৭ সালে ৮ সেপ্টেম্বর কবি প্রণয় কান্তি পরলোকগমন করেন।