প্রণোদনার পাশাপাশি কঠোর নজরদারি

চট্টগ্রামের ২৭ হাজার জেলে পরিবার পাচ্ছে সহায়তা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২১ মে, ২০২২ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিনের (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর করতে দুটো প্রদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। একদিকে মাছ আহরণে জড়িত জেলে পরিবারগুলোকে প্রণোদনা বা বিশেষ ভিজিএফ চাল দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মাছ শিকার বন্ধে কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একাধিক মনিটরিং টিমও গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য আহরণকালীন নিষিদ্ধ সময়ের জন্য চট্টগ্রামসহ দেশের ১৪টি উপকূলীয় জেলার দুই লাখ ৯৯ হাজার ১৩৫টি জেলে পরিবার বিশেষ ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রামে মহানগরী এবং পাঁচটি উপকূলীয় উপজেলার ২৭ হাজার তিনটি জেলে পরিবারও অর্ন্তভুক্ত। প্রতিটি পরিবারকে ৮৬ কেজি করে চাল দেয়া হবে। চট্টগ্রামের জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে সন্দ্বীপ উপজেলায় চার হাজার ৮৭২ পরিবার, মিরসরাই উপজেলা দুই হাজার ১২৬ পরিবার, সীতাকুণ্ড উপজেলায় চার হাজার ৮০৫ পরিবার, আনোয়ারা উপজেলার তিন হাজার ৫৭০ পরিবার, বাঁশখালী উপজেলায় ৮ হাজার ৭২৮ পরিবার এবং কর্ণফুলী উপজেলায় রয়েছে ৪০০ পরিবার। এছাড়া নগরে নিবন্ধিত জেলে পরিবার আছে দুই হাজার ৫০২টি।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচির আওতায় আসা দেশের জেলে পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত চালের প্রথম কিস্তির ১৬ হাজার ৭৫১ দশমিক ৫৬ টন চাল গত ১২ মে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক অনুকূলে ছাড় করা হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রামের জন্য ছাড় করা করা হয় এক হাজার ৫১৩ দশমিক ২৮৮ টন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় চাল বিতরণ শুরু করেছে উপজেলা মৎস্য অফিসগুলো। এর বাইরে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় প্রতি উপজেলায় ১০ টি জেলে পরিবারকে ১০টি গরুর বাছুর দেয়া দেয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রতি উপজেলায় সরকার বরাদ্দ দিয়েছে আড়াই লাখ টাকা করে।
এ দিকে প্রণোদনার বাইরে মনিটরিংও জোরালো করা হয়েছে। মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে পৃথকভাবে কাজ করছে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর এবং জেলা মৎস্য অফিস। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে পাঁচটি পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে কন্ট্রোল রুমে দুটি, একটি বাজার মনিটরিং টিম এবং চেকপোস্টে দুটি টিম রয়েছে। এছাড়া জেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে পাঁচ উপকূলীয় উপজেলায় পাঁচটি এবং নগরে একটি টিম কাজ করছে।
এছাড়া প্রতিটি বিভাগের জন্য পৃথক মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিভাগে গঠিত টিমের সদস্য সংখ্যা সাতজন। এছাড়া নিষিদ্ধকালীন সময়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরালো করার স্বার্থে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক এর উপর অর্পিত ক্ষমতা জেলা এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদেরও প্রদান করে গত ১৬ মে অফিস আদেশ জারি করা হয়।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার প্রথমদিন গতকাল সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে কোস্টগার্ড এবং নৌ-পুলিশ যৌথভাবে সন্দ্বীপ-কুমিরা চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ দুটি বেহুন্দি জাল ও দুই কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেলে পরিবারগুলোকে মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে মনিটরিংও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘাটে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয় তা পূরণে মৎস্য বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে এ সময়ে (নিষিদ্ধকালীন সময়) বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ প্রজনন করে এবং ডিম ছাড়ে। কাজেই এ সময়টা যদি মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকে তাহলে মৎস্য সম্পদের মজুদ বাড়বে। অতীতেও তার প্রমাণ মিলেছে। আসলে মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ না দিলে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি পাবে না। এ কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলেরা যাত মাছ শিকার করতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকবে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর। গঠিত মনিটরিং টিম সবকিছু দেখভাল করবে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সামসুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালে প্রথমবার ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। তখন কেবল বাণিজ্যিক ট্রলার এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের নৌ-যানকে এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। বর্তমানে বাণিজ্যিক ট্রলার আছে ২৩৩ টি। এছাড়া কাগজে কলমে ৬৮ হাজার যান্ত্রিক মৎস্য নৌ-যান আছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আহত ১০
পরবর্তী নিবন্ধলায়ন্স ক্লাব সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ