পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ ১৯টি পণ্য পাটের বস্তায় পরিবহন ও মজুদকরণ বাধ্যতামূলক করে সরকার। অথচ প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পাটের বস্তায় এসব পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে পরিবেশ বান্ধব পাটের বস্তার ব্যবহারের উদ্যোগটিও এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে।
চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর চালের আড়তদাররা জানান, বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের বস্তার ছড়াছড়ি। তবে উত্তরাঞ্চলেও কয়েকটি অঞ্চল থেকে ২০ শতাংশ মতো পাটের বস্তায় চাল আসছে। শুধু ধান চাল নয় দেশের মোট ভোগ্যপণ্যের ৯০ শতাংশই পরিবহন ও মজুদ হচ্ছে প্লাস্টিক বস্তায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে একটি পাটের বস্তার দাম পড়ছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, পক্ষান্তরে একটি প্লাস্টিক বস্তার দাম পড়ে ১৫-২০ টাকা। তাই ব্যবসায়ীরাও পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্লাহ বলেন, এখন বাজারে প্লাস্টিকের বস্তায় ধান চাল পরিবহন হচ্ছে, এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে মাঝে মাঝে পাট দপ্তরের লোকজন বাজার পরিদর্শন করতে আসেন। আসলে প্লাস্টিকের বস্তার খরচ কম, তাই মিলাররা এই বস্তায় মোড়কীকরণ করছেন।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে অল্প কিছু পণ্য পাটের বস্তায় পরিবহন হচ্ছে। আমাদের কাছে মিল মালিকরা যেভাবে পণ্য পাঠাচ্ছেন আমরা সেভাবেই বিক্রি করছি।
চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্লাস্টিক বস্তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নাই। প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করে সরকার বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা ১০ শতাংশও কার্যকর হয়নি। এটি মূলত কিছু ব্যবসায়ীর ইচ্ছার অভাব এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতির কারণে এখনো বাজার প্লাস্টিক বস্তার দখলে।
পাহাড়তলী বণিক সমতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজার এখন প্লাস্টিক বস্তায় সয়লাব হয়ে গেছে। এক সময় পাটের বস্তায় চাল আসতো। কিন্তু এখন ৮০ শতাংশ চাল আসছে প্লাস্টিক বস্তায়। মাঝে মাঝে প্রশাসন প্লাস্টিকের বস্তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু এক্ষেত্রে দাবি হলো-যেখানে প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য মোড়কীকরণ করা হচ্ছে, সেখানে যেন অভিযান চালানো হয়। মিলের মালিকরা প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য বাজারজাত না করলে সমাধান হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, পাটের বহুমুখী ব্যবহার, সমপ্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যবাধকতা করে সরকার। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে গত ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া ও তুষ-খুদ-কুঁড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।












