বৌদ্ধ সমাজের এক প্রজ্ঞাদীপ্ত আলোকবর্তিকা, সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবিরের প্রয়াণে সমগ্র বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ অঙ্গন আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় মগ্ন। তাঁর নীরব, সংযমী, ধ্যানমগ্ন জীবন ছিল মানবতা, করুণা ও সদ্ধর্মের এক অনিত্য প্রবাহ; যা তাঁকে কেবল বাংলাদেশের সীমায় নয়–বিশ্ববৌদ্ধ সমাজেও এক সম্মানিত আধ্যাত্মিক মুরুব্বি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। “জগতে তব কী মহোৎসব, বন্দন করে বিশ্ব”–শিরোনামটি যেন তাঁর পূর্ণ জীবনচর্যারই এক প্রকট প্রতিধ্বনি, কারণ তাঁর কর্ম, দানশীলতা, সেবা ও কৃপার আলো মৃত্যুর পরেও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে।
সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির ছিলেন এমন এক ধর্মীয় গুরু যিনি ধর্মকে কোনো আচারবদ্ধ কাঠামো নয়–মানুষের জীবনে কল্যাণ আনয়নকারী এক নৈতিক শৃঙ্খলা হিসেবে দেখতেন। তাঁর জীবনধারা ছিল অত্যন্ত সরল, বিনয়ী ও সন্ন্যাসব্রতে নিবেদিত। বাহ্যিক জাঁকজমক থেকে দূরে থেকেও তিনি মানুষের অন্তর্দীপ জ্বালাতে পেরেছিলেন তাঁর শাস্ত্রজ্ঞতা, ধ্যানচর্চা, প্রজ্ঞা ও নৈতিকতার আলো দিয়ে। তাঁর দিনযাপন ছিল নিঃস্বার্থ সেবায় নিবদ্ধ; প্রতিটি সিদ্ধান্তে ছিল মানবকল্যাণের গভীর আহ্বান। তিনি নিজেকে কখনো উচ্চাসনে ভাবেননি–বরং সবসময় বলতেন,“মানুষের মঙ্গলই বুদ্ধের বাণীর সত্য প্রতিফলন।”
মানবসেবায় সংঘরাজের অবদান বিশাল। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্র শিশু, পথশিশু ও অনাথদের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন অসংখ্য অনাথ আশ্রম, সেবালয় ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। তাঁর এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু আশ্রয় বা খাদ্য নয়–মানবিক শিক্ষা, শৃঙ্খলা, ধ্যানময়তা ও নৈতিক চরিত্র গঠনের পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশেষ করে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় শিক্ষা ও সেবার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ত্যাগ ও শ্রম দিয়েছেন–তা আজও বিরল এক অনুপ্রেরণা। তিনি বিশ্বাস করতেন, যে শিশু শিক্ষার আলো পায়নি, সে মানবিকতার সম্পদ থেকেও বঞ্চিত থাকে–এ বিশ্বাস থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বহু বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিহার, পাঠশালা ও মানবসেবামূলক সংগঠন। তাঁকে শ্রদ্ধা।












