দেশব্যাপী পঞ্চম ধাপে ৩০ পৌরসভায় আগামীকাল রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই, বারইয়ারহাট ও রাঙ্গুনিয়া এই তিন পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রচার।
রাঙ্গুনিয়া : উৎসবমুখর ভোটের অপেক্ষা
রাউজান প্রতিনিধি
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা নির্বাচনে প্রচারণা গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। উৎসবমুখর ভোটের অপেক্ষায় ভোটের দিন কি করতে হবে কর্মী-সমর্থকদের সেই দিক নিদেশনা দিলেন প্রার্থীরা। এই পৌরসভার এখন মেয়র পদে প্রার্থী আছেন ২ জন। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আছেন বর্তমান মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার। অন্যদিকে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রার্থী হেলাল উদ্দিন শাহ। গত নির্বাচনেও তারা পরস্পরের বিপরীতে ভোট যুদ্ধে ছিলেন। এখানে সাধারণ ওয়ার্ডে নির্বাচনে লড়বেন ৩৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে আছেন ৮ প্রার্থী। আগামীকাল রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৯১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৫১৯ জন ,নারী ভোটার ১২ হাজার ২৭২ জন। ১১টি ভোট কেন্দ্রের ৭০টি বুথে এবার ভোট গ্রহণ করা হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে আছেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে -জালাল উদ্দিন, এছেল আহম্মদ, ২ নম্বর ওয়ার্ডে – নুরুল আবছার জসিম, মো. নাছের, ইউসুফ রাজু ও আবদুল ছত্তার, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে – জসিম উদ্দিন শাহ, শাহাদাত হোসেন সুমন, সিরাজুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে – মো. নজরুল ইসলাম, মো. আইয়ুব ও মনছুর উদ্দিন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে – মোহাম্মদ সেলিম ও আবুল কাশেম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে – অলি আহম্মদ মাস্টার, তারেকুল ইসলাম, তানভীর ইসলাম, আবদুল ছত্তার, সুবেল দেব, আবদুল মান্নান ও লিটন খাঁন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে – তারেকুল ইসলাম চৌধুরী, মিনাজুর রহমান বেলাল, জরিপ আলী ও নুরুল আবছার, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে – এনাম উদ্দিন আইয়ুব, মাহবুবুল আলম সিকদার, মনজুর হোসেন, কফিল উদ্দিন সিকদার, আশিষ বড়ুয়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে – লোকমানুল হক তালুকদার, মহিউদ্দিন পারভেজ, ওমর ফারুক, জসিম উদ্দিন, আবদুল জব্বার, জালাল উদ্দিন। অন্যদিকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে- জেসমিন আক্তার ও রুবি বেগম, ৪, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে – নূর জাহান বেগম, ইয়াছমিন আক্তার ও সামশুন নাহার, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে- ইয়াছমিন আক্তার, রুনা আক্তার ও দিলু আক্তার।
রিটানিং অফিসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিন ১০জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। নিরাপত্তায় থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তিনি জানান, ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ভোট হবে ইভিএমে মাধ্যমে।
মীরসরাই ও বারইয়াহাট
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা, বিজিবি মোতায়েন
মীরসরাই প্রতিনিধি
মীরসরাই ও বারইয়াহাট পৌরসভার নির্বাচন কাল। দুই পৌরসভাতেই আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হবার ঘটনাও ঘটেছে ইতোমধ্যে। সংঘাতের আশংকাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছে। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল প্রচারণার শেষ সময়। সকল প্রার্থীর সরব প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। মীরসরাই পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নুর মোহাম্মদের প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী সঠিক না থাকায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। বারইয়াহাট পৌরসভায় মাঠে সরব ছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম খোকন। দিনরাত প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তার পক্ষে মাঠে ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মন্ত্রীপুত্র মাহবুব রহমান রুহেলসহ হেভিওয়েট ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু এখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী দিদারুল আলমকে মাঠে দেখা যায়নি বলে জানান খোদ বিএনপির অনেকেই। সাবেক মেয়র প্রার্থী ও সাবেক পৌর বিএনপির সভাপতি মাঈনউদ্দিন লিটন বলেন, আমি নিজে গতবার মেয়রপ্রার্থী ছিলাম, শত প্রতিকূলতায় আমিও হামলা মামলার শিকার হয়েছি। তবুও বিএনপির সকল কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে নিয়ে মাঠে ছিলাম। এই বিষয়ে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, এমন অভিযোগ সত্য নয়, বিএনপির ভোটাররা ভয়ে আছেন, কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে পারবেন কিনা শংকা বোধ করছেন, তবুও নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি মাঠে থাকবো। এছাড়া প্রচারণার বিষয়েও তিনি বলেন, আমি সকল ওয়ার্ডেই ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছি।
আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম খোকন বলেন, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং মীরসরাই উপজেলায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উন্নয়নের জোয়ার দেখে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের সাড়া না পেয়ে বিএনপি নিজেরাই হয়তো প্রচারণা করে লাভ নেই মনে করছে।
এদিকে দুই পৌরসভাতেই মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে তেমন কোনো উত্তেজনা না থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই। মীরসরাই পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড নাজিরপাড়ার কাউন্সিলর প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার প্রচারণা শেষ করে রাত সাড়ে ১০টায় নিজ নির্বাচনী ক্যাম্পে অবস্থানকালে প্রতিপক্ষ তাঁর ওপর হামলা চালায় এবং তাঁর কয়েকজন কর্মী সমর্থককে নাজেহাল করে। এসময় তাঁর গায়ের পাঞ্জাবিও ছিঁড়ে ফেলে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মীরসরাই পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী জহির উদ্দিন ও রিয়াজ উদ্দিন পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেন। এখানে প্রতিটি ওয়ার্ডেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিরাজ করছে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন। বারইয়াহাটেও যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান বলেন, আমাদের জরিপে দুই পৌরসভায় ৬টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হলেও আশা করছি কোথাও কোনো প্রকার গোলযোগ করার সুযোগ কেউ পাবে না। নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে ৩ প্লাটুন (৬৫ জন ) বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মীরসরাই পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী ও বারইয়াহাট পৌরসভায় কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬২ জন প্রার্থী। মীরসরাই পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ৯,৪৪৪ জন। বারইয়াহাট পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ৬,৬২৯ জন।