চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ–নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার–প্রচারণার শেষ দিন আজ। রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী এই উপ–নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের প্রচার–প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে। ৩০ জুলাই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৫৬টি কেন্দ্র ও ১২৫১টি বুথে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য এরইমধ্যে ১ হাজার ৪০৭টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণের জন্য ৪ হাজার ১০৬ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং ২ হাজার ১১০টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সাথে দায়িত্ব পালনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনানুগ নির্দেশনা প্রদানের জন্য আগামী ২৯ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ (নৌকা) মোট ৬ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন– জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সামসুল আলম (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশীদ মিয়া (ছড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরমান আলী (বেলুন) ও মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট)।
গতকাল চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ নির্বাচনের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে ভোটকেন্দ্রে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। মোট ১ হাজার ৪০৭টি ক্যামেরা বসানো হবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে এবং বুথে ভোটের দিন প্রাথৃী এবং সমর্থকরা গিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে সিসি টিভি ক্যামেরা দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনের দিন ভোটকক্ষের পরিস্থিতি মনিটরিং করার লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র নম্বর ও কক্ষ নম্বর লেখা থাকবে। যাতে মনিটরিং কক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরায় ভোটকেন্দ্র নম্বর ও কক্ষ নম্বর স্পষ্ট বোঝা যায়। এ ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ নম্বর দেখেই প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান আজাদীকে বলেন, ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরায়
ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ভোটকেন্দ্রে কোনো প্রার্থী যাতে উত্তাপ ছড়াতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে। কোনো কেন্দ্রে কোনো প্রার্থী কিংবা তার সমর্থকরা প্রভাব বিস্তার বা আইন ভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব বণ্টন : নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালনের জন্য সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আক্তারকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১২টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলমগীরকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানাকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ২৭টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ২২টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরীকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুককে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৮, ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও ভোটার সংখ্যা : চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ নির্বাচনে মোট ১৫৬টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৮জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৭ জন।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ নির্বাচনে ১৫৬টি কেন্দ্রের ১২৫১টি বুথে ভোটগ্রহণের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৬৪জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৩১৪জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২৬২৮জন পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের জন্য ২ হাজার ১১০টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর শুলকবহর, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫ নম্বর রামপুর ও ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা. আফছারুল আমীন এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ২ জুন ডা. আফছারুল আমীন এমপি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় আগামী ৩০ জুলাই এ আসনের উপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।