বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্যের একটি দিক হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। অস্বীকার করার উপায় নেই যে একটি স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে দেশের অন্যান্য খাতের মতো যোগাযোগ খাত পেয়েছে উন্নয়নের অভাবনীয় মাত্রা। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক খাতের সার্বিক বিকাশে গত ১৫ বছরে যোগাযোগ খাতে গ্রহণ করা হয়েছে বেশকিছু মেগা প্রজেক্ট। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, গুরুত্বপূর্ণ শহর, বন্দর, বাণিজ্যিক পয়েন্টে দেশের যেকোনো প্রান্তে অনায়াসে যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক, মেরিন ড্রাইভসহ উন্নত দেশগুলোর মতো সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার নেটওয়ার্কে এসেছে বাংলাদেশ।
গত ১৪ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন করে সাতটি সড়ক নির্মাণ ও সমপ্রসারণ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নির্মাণের পর রাস্তাগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ২১ দশমিক ৩৮৭ কিলোমিটার। এ লক্ষ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে একটি প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করেছে চসিক। এর প্রাক্বলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সেকেন্ডারি সড়ক সমপ্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির ডিপিপি কয়েকদিন আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় ২৮টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, একটি ফুট ওভারব্রিজ ও একটি রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয় ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিবেদনে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব সড়ক ঘিরে প্রকল্প নিয়েছি ওইসব সড়ক বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রশস্ত। সেখানে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এতে ওইসব এলাকার জনগণের চরম দুর্ভোগ হয়। ছাত্রছাত্রী এবং অসুস্থ লোকজনের সমস্যা হয় বেশি। তাই মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্পে প্রস্তাবিত সড়কগুলো প্রশস্ত করলে নগরবাসীর কষ্ট লাঘব হবে। একইসাথে শহরের অন্যান্য স্থানের সাথে সহজ সংযোগ সড়ক প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান বন্দর, শিল্প ও বাণিজ্য নগরী। সারা বছর দেশ–বিদেশের লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী এই শহরে তাদের ব্যবসায়ী পণ্য ক্রয়–বিক্রয়ের জন্য আসেন। রাস্তার অপ্রশস্ততার কারণে সৃষ্ট যানজটের ফলে অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্রস্তাবিত সড়কগুলো প্রশস্ত হলে সমস্যাগুলো দূর হবে।
বর্তমান সরকারের সময়কালে সাফল্য পাওয়া খাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। শিক্ষাবিদ ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত–সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা বাস্তবায়নে অন্যতম সূচক আধুনিক–নিরাপদ–পরিবেশবান্ধব–উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা। প্রযুক্তির উৎকর্ষে গত ১৪ বছরে যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের নতুন মাইলফলক নির্মিত হয়েছে। দেশব্যাপী সড়ক সংস্কার, নতুন সড়ক নির্মাণ, প্রশস্তকরণের সুবাধে বদলে গেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান। প্রতিটি বিভাগীয়–জেলা শহর, বন্দর, বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে কোনো প্রান্তে অনায়াসে যাওয়া যাচ্ছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় প্রতিবেশী দেশগুলোয় সহজ ও হয়রানিমুক্ত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বিশ্বমানের যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে সাউথ এশিয়া সাব–রিজিওনাল ইকোনমিক কো–অপারেশন (সাসেক) আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা–২০৪১’ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক ছয় লেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আট লেনে উন্নীত এবং দেশের প্রতিটি জেলার সঙ্গে রেল পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথকে সমান গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সড়কের স্থায়িত্ব ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে প্রকৌশলীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নেরও উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকৌশলীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন সড়ক।.