প্রকৃত দখলদারদের বাদ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ

চকরিয়ায় প্যারাবন উজাড়

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১২ অক্টোবর, ২০২৪ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ার উপকূলীয় বদরখালীর সমুদ্র মোহনা ঘেঁষা এলাকায় উপকূলে সৃজিত প্যারাবন উজাড় করে চিংড়ি ঘের তৈরির ঘটনায় আদালতের নির্দেশে অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে প্রকৃত দখলদারদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রায় আট মাস পর প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিদর্শক ফাইজুল কবির। দাখিলকৃত এই প্রতিবেদনে প্রকৃত দখলদারদের নাম স্থান পায়নি বলে অভিযোগ ওঠে। আর ইতোমধ্যে ওই কর্মকর্তা কক্সবাজার থেকে অন্যত্রও বদলি হয়ে গেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সমুদ্র মোহনা সংলগ্ন উপকূলীয় বদরখালী সেতুর পূর্বাংশে মাতামুহুরী নদীতীরের ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার প্রস্থের জায়গাতে অন্তত ২০০ বাইন ও কেওড়া গাছ কাটা হয়েছে। এরপর সেখানে চিংড়ির ঘের নির্মাণের জন্য দুই ফুট উচ্চতার একটি বাঁধ দেওয়া হয়। প্যারাবন নিধনের ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন ও ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, যা কোনোভাবেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। প্রতিবেদনে প্যারাবন নিধনের সঙ্গে জড়িত ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এই বিষয়ে প্যারাবন সৃজনকারী সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ) কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক খান জয়নাল আবেদীনের দাবি, ওইদিন ফজরের আজানের সাথে সাথে শতাধিক লোক (শ্রমিক) নেমে পড়েন প্যারাবন নিধনযজ্ঞে। এদিন কম করে হলেও কয়েক হাজার গাছ কেটে সাবাড়ের মাধ্যমে চিংড়ি ঘের তৈরি করেন প্রভাবশালীরা। প্যারাবন নিধনের এই কর্মযজ্ঞ শত শত মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। এ নিয়ে দৈনিক আজাদীসহ গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করলে দখলদার এবং প্যারাবন উজাড়কারী ৪০ জনের একটি তালিকাও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত দখলদারদের বাদ দিয়ে খেটে খাওয়া ১৩ জনের নামে আদালতে প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এতে এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাই নতুন করে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে প্রকৃত দখলদারদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এজন্য আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে আদালতে নারাজি আবেদন দিয়ে নতুন করে তদন্ত চাওয়া হবে। যোগ করেন উবিনীগ কর্মকর্তা খান জয়নাল আবেদীন।

চকরিয়া আদালত সূত্র জানায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিদর্শক ফাইজুল কবির বদরখালীর প্যারাবন উজাড় নিয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্যারাবন উজাড় নিয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে আদালতের বিচারক মো. জাহিদ হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেন এবং এই ঘটনার তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারকে নির্দেশ দেন।

আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফাইজুল কবির বলেন, আদালতের নির্দেশনা মতে সরেজমিন ঘটনার অনুসন্ধান এবং প্রত্যক্ষপরোক্ষ সাক্ষীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অবশ্য জড়িত হিসেবে উবিনীগ যেসব ব্যক্তির নামের তালিকা দিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো স্বাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিনের ভাষ্য, প্যারাবন উজাড়ের ঘটনায় নিরীহ লোকজন আসামি হয়ে থাকলে এখন কিছুই করার নেই। যদি আদালত ফের তদন্তের আদেশ প্রদান করেন তাহলে নতুন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮ জনকে আসামি করে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজার রিসোর্টে পর্যটকের ঝুলন্ত লাশ