চোরাইভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছিলেন পটিয়ার ৯ নং জঙ্গলখাইন ইউনিয়র পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গাজী মো. বখতিয়ার উদ্দিন ওরফে বকুল মেম্বার। এ বিষয়ে অবগত হয়ে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিচ্ছিন্নকরণ প্রতিবেদনেও তার নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এফআইআর রুজুর জন্য যে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় সেখানে বকুল মেম্বারকে বাদ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ভিন্ন দু’জন ব্যক্তির নাম। পরবর্তীতে উক্ত প্রস্তাবের অনুমোদনও মেলে। শুধু তা–ই নয়, প্রকৃত অপরাধীকে বাঁচাতে এফআইআর রুজু না করেই ভুল রেকর্ড তৈরি করে ভুয়া এফআইআর দাখিলের কপি নথিতে উপস্থাপন করা হয়। যে দু’জন ভিন্ন ব্যক্তিকে বকুল মেম্বারের জায়গায় নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে তাদের একজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে দুদক উক্ত বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করলে বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপ–সহকারী পরিচালক আপেল মাহমুদ বিপ্লব উক্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সম্প্রতি তিনি উক্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করে দুদক প্রধান কার্যালয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এরইপ্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয় কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে গতকাল দুদক কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ বিপ্লব বাদী হয়ে বকুল মেম্বারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার অপর ৫ আসামির সবাই কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (কেজিডিসিএল), চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। তারা হলেন– কেজিডিসিএল’র পরীক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ ডিপার্টমেন্টের উপ–মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. তাজউদ্দিন ঢালী, বিতরণ উত্তর ডিপার্টমেন্টের পিএমইসি উত্তর শাখার উপ–ব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম, বিক্রয় দক্ষিণ–২ ডিপার্টমেন্টের জোন–১১ শাখার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মুহাম্মদ রিফাত নওশাদ ভূঁঞা, কেজিডিসিএল’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও প্রকৌশলী সুধীর কুমার সাহা রায়। দুদক জানায়, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ কেজিডিসিএল এর ভিজিল্যান্স ডিপার্টমেন্ট পটিয়া থানাধীন মনসারটেক এলাকায় নাম ও সাইনবোর্ডবিহীন একটি অবৈধ অ্যালুমনিয়াম ফ্যাক্টরিতে চোরাইভাবে নেওয়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ প্রতিবেদনে চোরাইভাবে নেওয়া গ্যাস সংযোগকারী হিসেবে মোক্তার হোসেন বকুল মিয়া (প্রকৃত নাম গাজী মো. বখতিয়ার উদ্দিন ওরফে বকুল মেম্বার) ও অপর একজনের নাম উল্লেখ ছিল। কিন্তু কেজিডিসিএল এর স্মারক মূলে গ্যাস বিল ও জরিমানা বাবদ ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ১৩ টাকা পরিশোধের জন্য নাজমুল হোসেনসহ অপর দু’জন ব্যক্তিকে নোটিশ করা হয়। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে নাজমুল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে দুদকে একটি অভিযোগ করেন। এরইপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিচ্ছিন্নকরণ প্রতিবেদনে উল্লিখিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ভিন্ন ব্যক্তিদের নামে এফআইআর রুজুর প্রস্তাব উপস্থাপন করে অপরাধীদেরকে আইনের শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য পটিয়া থানায় এফআইআর রুজু না করেই ভুল রেকর্ড বা লিপি তৈরি করে ভুয়া এফআইআর দাখিলের কপি সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ নথিতে উপস্থাপন করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মনসা মৌজার বি.এস ৩৫৮৭ দাগে মোট ০.৩৬০০ একর জমি নাল শ্রেনী হিসেবে আবদুল গনি, পিতা–ইউছুফ আলী এর নামে বি.এস ৯৫ নং খতিয়ান প্রচার আছে। আরও অন্যান্য দাগের সাথে উক্ত বি.এস ৩৫৮৭ দাগের আন্দরে ০.২৮৫৪ একর জমি নিয়ে বেগম রহিমা আকতার, স্বামী মোহাম্মদ আলী নবী গং এর নামে ১৪৪৪ নং খতিয়ান সৃজন করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত সৃজিত ১৪৪৪ নং খতিয়ান থেকে ৩৫৮৭ দাগের উপর আলী নবী চৌধুরীর ওয়ারিশগণ (জসিম উদ্দিন চৌধুরী গং, গ্রাম: দক্ষিণ হুলাইন, ডাকঘর: এয়াকুবদন্ডী, ইউপি: ৫নং হাবিলাসদ্বীপ, থানা: পটিয়া) কর্তৃক উক্ত ভূমিতে ২০০৫/২০০৬ সালের দিকে একটি বেকারি চালু করা হয়েছিল, যা ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে গাজী মো. বখতিয়ার উদ্দিন ওরফে বকুল মেম্বার উক্ত স্থাপনাটি জসিম উদ্দিন চৌধুরী গং–দের কাছ থেকে জায়গাসহ ভাড়ায় নিয়ে ২০১২/১৩ সালের দিকে সেখানে অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি চালু করেন। যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালু ছিল। মামলার এজাহারে বলা হয়, গাজী মো. বখতিয়ার উদ্দিন ওরফে বকুল মেম্বার চোরাইভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ১৩ টাকা (জরিমানা, বিচ্ছিন্নকরণ ও সার্ভিস লাইন কর্তন ব্যয়সহ) সমমূল্যের গ্যাস ব্যবহার করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অপরাধ করেছেন। অন্যদিকে কেজিডিসিএল এর কর্মকর্তারা বিচ্ছিন্নকরণ প্রতিবেদনে উল্লিখিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ভিন্ন ব্যক্তিদের নামে এফআইআর রুজুর প্রস্তাব উপস্থাপন, অনুমোদন ও প্রকৃত অপরাধীদেরকে আইনের শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক এফআইআর রুজু না করেই ভুল রেকর্ড বা লিপি তৈরি করে ভুয়া এফআইআর দাখিলের কপি নথিতে উপস্থাপন করার অপরাধ করেছেন। আসামিদের এসব অপরাধ দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপ–পরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে এ মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনা তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।












