পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী বেশ কিছু নারী আছেন যারা অনবরত সংগ্রাম করে সংসার চালান। এই নারীদের সংগ্রাম প্রকাশ্যে হলেও সচরাচর কারো নজরে পড়ে না। এই পাহাড়ি নারীরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই পাহাড় সেই পাহাড় ঘুরে বেড়ান তরু তরুকারির খোঁজে। পাহাড়ের আনাচে খুঁজে যা পান তা সংগ্রহ করে এনে রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করেন। যা আয় হয় সে টাকায় সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নেন। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে পাহাড়ি নারীদের সংগ্রাম। কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী, রাঙ্গামাটি সদরসহ প্রায় সব উপজেলায় এরকম চিত্র দেখা যায়।
কাপ্তাই উপজেলা সদর বরইছড়ি, নতুনবাজার, জেটিঘাট, লেকশোর, লেক প্যারাডাইসসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে বসে এসব নারীদের হরেক রকমের দ্রব্যাদি বিক্রি করতে দেখা যায়। চলার পথে অনেকে গাড়ি থামিয়ে নারীদের কাছ থেকে নানান ধরনের সামগ্রী কিনেন।
কাপ্তাই–চট্টগ্রাম সড়কের পাশে বরইছড়িতে সরেজমিন দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন নারী ঢেঁকি শাক, কলা গাছের বুগুলি, কচুর লতি, কাঁচা কলা, বাঁশ করুল, কুমড়া, পাটশাক, আদামগুনি, বেগুন, টকপাতা, কাঁচা মরিচ, কচুর ছড়া, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি বিক্রি করছেন।
বিনা চাকমা নামক এক নারী জানান, এ সকল তরু–তরকারি তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে খুঁজে আনেন। আবার কারো কারো বাড়ির আশেপাশে চাষ করা দ্রব্যাদিও অনেকে বিক্রি করতে আনেন। তরতাজা হওয়ায় ক্রেতারা এসব পণ্য কিনেন বলেও তিনি জানান।
কুসুমিকা চাকমা বলেন, তারা প্রতিদিন বিকালে পাহাড়ে তরু–তরকারি খুঁজতে যান। যা কিছু সংগ্রহ করে আনতে পারেন তা বাজারে বিক্রি করে বাড়ির জন্য নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে যান।
দৈনিক কত টাকা আয় হয়–জানতে চাইলে মিনাক্ষী চাকমা নামে একজন বলেন, দৈনিক ৩ থেকে ৪০০ টাকা হয়, আবার কম–বেশিও হতে পারে। তবে পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে যা কিছু আনা হয় তার সবই বিক্রি হয় বলেও তিনি জানান।
কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আপাই মারমা বলেন, পাহাড়ি নারীরা অনেক সংগ্রাম করে চলেন। তারা প্রতিদিন পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে জিনিসপত্র সংগ্রহ করে আনেন। তবে তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করেন। অবসর পেলে এই নারীরা ঘরের আঙ্গীনায় বসে কেউ চাদর বুনেন, কেউবা প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি তৈরি করেন। এসব নারীদের বেশিরভাগ তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেন। প্রতিদিন তারা সবার সামনেই সংগ্রাম করে। কিন্তু তাদের সংগ্রাম সাধারণত কারো চোখে পড়ে না।












