প্রকাশ্যে এল নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব

কমিটিহীন নগর বিএনপি

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ২৪ জুন, ২০২৪ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নগর বিএনপিতে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। অবশ্য তা প্রকাশ্যে না এনে দলের যে কোনো কর্মসূচি একসঙ্গে পালন করতেন সাংগঠনিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। এতে নগরের নেতৃবৃন্দের ‘ঐক্য’ নিয়ে সুনাম ছিল কেন্দ্রে। তবে এবার ফাটল ধরেছে সেই ঐক্যে। একই সঙ্গে প্রকাশ্যে এসেছে নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্বও।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় গতকাল রোববার দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ছিল সারা দেশে। তবে নগরে দুটি ব্যানারে পালিত হয়েছে এ কর্মসূচি। এর মধ্যে চকবাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘নগর বিএনপি’ এবং আমানত শাহ (রহ.) এর মাজারে ‘সাংগঠনিক পুনর্গঠন টিম’এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্য দিয়ে নগর বিএনপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে বলে মনে করেন দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী।

চকবাজারে পালিত হওয়া কর্মসূচিতে বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও সাবেক বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়কসহ থানা কমিটির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। অপরদিকে আমানত শাহ মাজারে পালিত হওয়া কর্মসূচিতে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অংশ নেন বলে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

১৩ জুন দিবাগত রাতে বিলুপ্ত করা হয় নগর বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি। যেকোনো মুহূর্তে নতুন কমিটি ঘোষণা করবে কেন্দ্র। নতুন কমিটিতে পদ পতে পারেন এমন আলোচনায় আছেন বিলুপ্ত কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান ও সদস্য আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল। সম্ভাবনা আছে শাহাদাতবক্করকে পুনর্বহালের।

এদিকে ২০২২ সালের ২১ মার্চ নগরের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে পৃথক পাঁচটি উপকমিটি করে দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। মূলত ওই উপকমিটিই সাংগঠনিক পুনর্গঠন টিম বলে পরিচিত। বিলুপ্ত কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়ক ও এক সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত ওই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন এস এম সাইফুল আলম, এম এ আজিজ, কাজী বেলাল, নাজিমুর রহমান ও এরশাদ উল্লাহ। তবে গতকাল পুনর্গঠন টিমের ব্যানারে আয়োজিত দোয়া মহফিলে অংশ নেননি এম এ আজিজ ও সাইফুল আলম। এর মধ্যে এম এ আজিজ শারীরিকভাবে অসুস্থ। মোবাইল ফোনে সাইফুল আলম আজাদীকে বলেন, বর্তমানে দেশের বাইরে আছি। তাছাড়া এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না।

জানা গেছে, ২০২২ সালে পুনর্গঠন টিমকে তদারকির জন্য একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটির প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। তাকে সহযোগিতা করার জন্য কয়েকজনকে সদস্য করা হয়। এরা হচ্ছেন ডা. শাহাদাত হোসেন, আবুল হাশেম বক্কর, তৎকালীন যুুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম, এস কে খোদা তোতন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম এবং নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম। আমানত শাহ’র মাজারে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে এস কে খোদা তোতন ও অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার অংশ নেন।

ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে আমাদের সব কাজ করে যেতে বলেছেন। চট্টগ্রামে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে। বর্তমানে কমিটি না থাকায় এ ফুটবল টুর্নামেন্ট অন্য কাউকে দিয়ে পরিচালনার জন্য বলেছিলাম কেন্দ্রকে। কিন্তু সেখান থেকে বলা হলো, যেহেতু কমিটি হয়নি তাই সব কাজ আমাদের করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ম্যাডামের সুস্থতা কামনায় আমরা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি। প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন এখানে।

পুনর্গঠন টিমের ব্যানারে আলাদা কর্মসূচি পালন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে যাদের নাম দেখছি তাদের আন্দোলনসংগ্রামেও দেখিনি। থাকতে পারত। তাছাড়া এখন তো আর পুনর্গঠনের বিষয় নেই, তাই ওই কমিটির কার্যক্রমও তো থাকার কথা না। এই পুনর্গঠন টিম যেহেতু অ্যাক্টিভ ছিল না তাই তারাও নগর বিএনপির কমিটি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকতে পারত।

ডা. শাহাদাত অভিযোগ করেন, নগর বিএনপিতে কোনো সময় গ্রপিং ছিল না। সবাই মিলেমিশে কাজ করত। কিন্তু বছর দুয়েক আগে ঢাকা থেকে বিশেষ কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার পর বিভক্তি চোখে পড়েছে।

পুনর্গঠন টিমের ব্যানারে দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়া নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি নেই। আবার সাংগঠনিক পুনর্গঠন টিম বাতিল বা স্থগিত করেনি। ওই হিসেবে পুনর্গঠন টিমের ব্যানারে আমরা ম্যাডামের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল করেছি। আলাদা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এখানে গ্রুপিংয়ের কিছু নেই।

একই দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়া কাজী বেলাল আজাদীকে বলেন, যেহেতু নগরে কমিটি নেই এবং অথরাইজড পার্সনও নেই, তাই পুনর্গঠন টিমের ব্যানারে দোয়া মাহফিল করেছি। কেন্দ্রের নির্দেশনা হচ্ছে দোয়া মাহফিল করা। সেই হিসেবে আমরাও করেছি। এখানে কোনো রাজনীতি ছিল না। আসলে যে যেভাবে পারে নেত্রীর সুস্থতার জন্য দোয়া করা উচিত।

এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।

জানা গেছে, ২০২২ সালে গঠিত পুনর্গঠন টিম ও তদারক কমিটি উভয়কে ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে তাদের ৭৭০টি কেন্দ্র কমিটি (ভোট কেন্দ্র), ১৫টি থানা ও আওতাভুক্ত ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটি করার নির্দেশনা ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে বসল পেসমেকার
পরবর্তী নিবন্ধদুদকে হাজির হননি বেনজীর