প্রকাশনা শিল্পের স্বর্ণযুগ ফিরবে?

নগরে বইমেলা শুরু ১ ফেব্রুয়ারি

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে দুটি বৃহৎ বইমেলা হয়; ঢাকা ও চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের বইমেলায় প্রাধান্য পায় চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থাগুলো। গত বছর (২০২৪) ২৩ দিনব্যাপি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রামের বইমেলায় বিক্রি হয় ৪ কোটি টাকার বই। বিপরীতে মাসব্যাপি ঢাকার বইমেলায় বিক্রি হয় ৬০ কোটি টাকার বই। অর্থাৎ বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঢাকার বইমেলা প্রকাশনা বা মুদ্রণশিল্পে চট্টগ্রামের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। অথচ একসময় স্বর্ণযুগ ছিল চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের। ষাটের দশকে শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান বহু লেখকের বই প্রকাশ করেছে এখানকার প্রকাশনা সংস্থাগুলো। সময়ের পরিক্রমায় সেই স্বর্ণযুগ আর নেই।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী মাসে নগরে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আজাদীকে জানিয়েছেন, নগরের জিমনেশিয়াম মাঠে আয়োজন করা হবে এবারের বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি চলবে মেলা। মেলা আয়োজনে বিভিন্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও জানান মেয়র।

এদিকে প্রকাশকসহ চট্টগ্রামের পাঠক ও লেখকসহ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, প্রকাশনা শিল্পের হারানো গৌরব ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনবে চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের বইমেলা। একইসঙ্গে বাস্তবতা তুলে ধরে প্রকাশকরা বলছেন, নানা কারণে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের ধস নেমেছে। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া চট্টগ্রামের বেশিরভাগ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বইগুলোর গুনগতমান নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। ভাল মানের কাগজ ব্যবহার না করা, দুর্বল বাইন্ডিং এবং প্রকাশনাগুলোর এডিটিং প্যানেল না থাকাকেও দায়ি করা হয়। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের বেশিরভাগ প্রকাশকই লেখক যে পাণ্ডুলিপি দেন তা ছাপিয়ে দেন। সেক্ষেত্রে বানান ভুলসহ নানা ভুল ভ্রান্তি থেকে যায়। যা আস্থাহীন করে তুলেছে পাঠককে। ফলে বইমেলা ঘিরে শত শত বই বেরুলেও চট্টগ্রামের বেশিরভাগ প্রকাশক মুদ্রণশিল্পের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। চট্টগ্রামের সর্বশেষ ৫টি বইমেলার বইমেলার দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যও তারা প্রশান।

যেমন ২০২৪ সালে মেলায় ৪০৫ টি নতুন বই এসেছে। বেশিরভাগ প্রবন্ধ এবং রাজনৈতিক গ্রন্থ। বইমেলায় ৪ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে বসন্ত উৎসবের দিন। সবচেয় কম ২ লাখ ১৮ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে শবে বরাতের দিন। এর আগে ২০২৩ সালে ২১ দিনের চট্টগ্রামের বইমেলায় দুই কোটি ৯৫ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। বিপরীতে ঢাকায় বিক্রি হয় ৪৭ কোটি টাকার বই। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে ২১ দিনের বইমেলায় বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচ কোটি ১৩ লাখ ৭২৫ টাকার বই। বিপরীতে একই বছর রাজধানীর ৩১ দিনের বইমেলায় বিক্রি হয় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। এর আগে ২০২০ সালে চট্টগ্রামে ২০ দিনে ১৮ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। ওই বছর ঢাকায় বিক্রি হয় ৮২ কোটি টাকার বই। এছাড়া ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে ২১ দিনে ১৩ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। একই বছর ঢাকায় বিক্রি হয় ৮০ কোটি টাকার বই।

প্রকাশনা সংস্থা খড়িমাটিএর স্বত্ত্বাধিকারী মনিরুল মনির আজাদীকে বলেন, এটা সত্য কয়েকটা ছাড়া চট্টগ্রামের বেশিরভাগ প্রকাশনার বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাইন্ডিং, প্রিন্টিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। বলা যায় ঢাকার তুলনায় কিছুই না। এভাবে হলে প্রকাশনা শিল্পের গৌরব ফিরবে কীভাবে।

তিনি বইয়ের ছাপানোর প্রতিটি ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে গেছে জানিয়ে বলেন, আগে ১০০ পৃষ্ঠার একটি বই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রাখতাম। এখন সেটা ৩০০ টাকা রাখতে হবে। কাগজ ও খালিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উপায়ও নেই। খরচ বেড়ে গেলে প্রকাশনা শিল্প ঠিকিয়ে রাখায় কঠিন হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তিনি বইমেলাকে সিটি কর্পোরেশন অন্যতম প্রধান ইভেন্ট হিসেবে নিয়ে অন্তরিকভাবে বইমেলা সফল করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার বইমেলা জিমনেশিয়াম মাঠে হবে। মাঠটি ব্যবহার করা নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে মৌখিক অনুমতি পাওয়া গেছে। ১ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। ১ মার্চ থেকে পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই রমজানের প্রস্তুতির সুবিধার্থে দুইদিন আগে মেলা শেষ করা হবে।

এবার কয়টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিতে পারে জানতে চাইলে বলেন, ১৩০টির মত স্টল হতে পারে। সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৫৩। প্রতিবছর সদস্যদের বাইরেও অনেকেই স্টল দেয়। এছাড়া গতবারের চেয়ে এবার ঢাকার প্রকাশনা কমানো হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবায়েজিদে তিন ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে পাঁচ কেন্দ্রে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত, অনুপস্থিত ৪৩৩