চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোনো প্রকল্পের ফাইল মন্ত্রণালয়ে গেলে তা অনুমোদন হয় না অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় তিনি মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায় এবং প্রকল্পের ফাইল দেখলে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বাসায় নিয়ে যান বলেও দাবি করেন।
তিনি গতকাল সোমবার সকালে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি (সিআইইউ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘পরিচ্ছন্নতা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান–২০২৫’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ডা. শাহাদাত বলেন, আমাদের তিনটি প্রজেক্ট এখনও এলজিআরডি মিনিস্ট্রিতে আছে। অ্যাডভাইজার সাহেব যখন দেখেন যে, এটা একটা প্রজেক্ট, তখন উনি ফাইলটা আর মিনিস্ট্রিতে রাখেন না, উনি সেটা ঘরে নিয়ে চলে যান। দিজ ইজ দ্য প্যাটিথিক সিনারিও, দ্যাট উই আর ফেসিং নাও আ ডেইজ। ফাইল আছে, সব আছে, কিন্তু খুব চমৎকারভাবে উনারা বাসায় নিয়ে চলে যান, মিনিস্ট্রি থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায়। মেয়র বলেন, এটা আমার গত ১১ মাসের অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ফাইল আর মিনিস্ট্রিতে পাওয়া যায় না। আমার ফাইল কই? বলে, ফাইল তো বাসায় নিয়ে গেছে। এখন বাসা থেকে ওটা আর পরে সিগনেচার হয় না। ওটা আর আসে না। এই ইউকের (যুক্তরাজ্যের) প্রজেক্টটা আমি আর করতে পারিনি। জাপান অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ কোরিয়ার প্রজেক্টও। আজ এগুলো যদি আমি অনেক দ্রুত পেতাম, তাহলে চট্টগ্রাম শহর অনেক সুন্দর করে দিতে পারতাম।
ডা. শাহাদাত বলেন, দায়িত্ব নিয়েছি ১১ মাস হচ্ছে। দায়িত্ব নেয়ার এক–দুই মাসের মাথায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। চট্টগ্রামকে সুন্দর রাখার জন্য আমি একটা থিম বিলিভ করি এবং সেটাকে প্রতিফলন ঘটাতে চাচ্ছিলাম। ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি, হেলদি সিটি, সেইফ অ্যান্ড স্মার্ট সিটি’র ভিশন নিয়ে ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে দেখা করলাম। আমাদের এখানে ময়লা পরিষ্কার করার মত যে ইক্যুপমেন্ট থাকার কথা সেটা নেই। প্রচুর ইক্যুপমেন্ট পুরনো হয়ে গেছে।
মেয়র বলেন, বছর দুয়েক আগে আমার আগের মেয়র সিটি কর্পোরেশনের জন্য ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহে ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট দেয়। দুই বছর ধরে সে প্রকল্পের কিছু হয়নি। যখন প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করি তখন বলেছি, এই ৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট থাকা মেশিনগুলো যদি আনতে না পারি তাহলে ৫৭টি খাল ও ৬০০ কিলোমিটার ড্রেন–এ কাজ করতে পারবো না। বিদ্যমান মেশিনগুলো দিয়ে যখন ক্লিন করি তখন সেগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এটা ঠিক করতে গেলে সময় লাগছে এবং টাকাও লাগছে।
মেয়র বলেন, এই যে চ্যালেঞ্জ সেজন্য ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) কাছে প্রথমে ফাইলটা দিলাম। আমি বলেছি, আমাকে এটা দিতে হবে। গ্রান্ট (অনুদান সহায়তা) হিসেবে দিতে হবে হবে, লোন চাই না। উনি খুব চমৎকারভাবে আমার ফাইলটি নিলেন। ওয়েস্ট টু এনার্জি নিয়ে ইউকে–এর একটা প্রজেক্টও দিয়েছি। এরপর উনি চট্টগ্রাম আসলেন। তখনও অনুরোধ করেছি।
ডা. শাহাদাত বলেন, এটা শুধু চট্টগ্রাম সিটির ব্যর্থতা নয়, এটা রাষ্ট্রের ও সরকারের ব্যর্থতা। চারশ কোটি টাকার আমার যে ইনসট্রুমেন্টের প্রজেক্ট, সেটা ফিন্যান্স মিনিস্ট্রিতে গিয়ে হয়ে গেল ২৯৮ কোটি টাকা। প্রায় একশ কোটি টাকা কেটে দিল। কেটে দিয়ে সেখানে বলে দিল, আমাদের ১৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে ৫ শতাংশ সুদে। আমরা একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। শুধু ৬০ কোটি টাকা তারা আমাকে বরাদ্দ দেবে। বাকিটা সিটি কর্পোরেশন থেকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ওই ফাইলটা কিন্তু এখনো পর্যন্ত ওই জায়গায় রয়ে গেছে। আমি এখনো দৌড়াচ্ছি, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমি কোথায় যাব? এর ওপর আর কেউ আছে? উনি চট্টগ্রামের মানুষ। উনাকে বলেছি, উনার পিএসকে বারবার বলেছি যে, কাজটা করে দেন। আমার মেশিনারিজ খুব দরকার। আমার আসলে মেশিনারিজ নেই।
তিনি বলেন, যে যন্ত্রপাতিগুলো আছে সেগুলো ১৫–২০ বছরের পুরনো। গত সরকার একটা ড্রেনেজ সিস্টেম করতে গিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার মত প্রায় খরচ করেছে। আর এটা যন্ত্রপাতি কেনার জন্য তিনশ কোটি টাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি ফেইল করলাম।
শাহাদাত বলেন, আমি ফেইল করলাম মানে রাষ্ট্র ফেইল করল। একদম স্ট্রেইট ফেইল করল। একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে দিতে কার্পণ্য করল। আমি এটা দিতে পারছি না। এটা অমাদের ব্যর্থতা। জলাবদ্ধতা একটা বড় সমস্যা। আমি এটা সমাধান করতে চাই।
তিনি বলেন, এখানে যে উপদেষ্টাকে পাঠানো হল, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আমি উনার সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। অনুরোধ করলাম। সবশেষে তিনি বললেন, প্রথমে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হয়ে যাক, তারপর আপনি সেটা পাবেন। আমার ৫০–৬০ শতাংশ জলাবদ্ধতার সমস্যা ইতিমধ্যে সমাধান হয়েছে। এখনো আমি সেটা পাচ্ছি না।