প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা

রেললাইনের উপর ব্রিজের উচ্চতা ।। চুক্তি হওয়ার পরও মেলেনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন থমকে আছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সেতুর নির্মাণকাজ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

চুক্তি স্বাক্ষর ও সম্মতিপত্র দেয়ার পরও অনুমোদন না দেয়ায় রেলওয়ের ব্রিজের উচ্চতার গ্যাড়াকলে পড়ে সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললেও রেলওয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় ফৌজদারহাটে বায়েজিদ লিংক রোডের উপর এবং আউটার রিং রোডের ফিডার রোড-৩ এর উপর নির্মিত দুটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ আটকে আছে। মাত্র এক থেকে দুই মাসের কাজের জন্য প্রকল্প দুটির বিপুল পরিমাণ টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, পুরো ব্যাপারটি মন্ত্রণালয় দেখছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
সূত্রে জানা যায়, রেললাইনের উপর ব্রিজের উচ্চতা নিয়ে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রকল্প থমকে আছে। এর মধ্যে ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোডের ফৌজদারহাট অংশে প্রায় ৮৫০ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ওই সময় রেললাইনের কোনো ব্রিজ নির্মাণ করতে হলে কমপক্ষে ৭.৫ মিটার উচ্চতা নির্দিষ্ট করে রাখতে হতো। এর কম উচ্চতার কোনো ব্রিজ নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিত না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি নির্মাণকালে রেললাইনের উপর থেকে ৭.৬ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করে নির্মাণ কাজ শুরু করে। ব্রিজ নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এসে রেলওয়ে ৮.৫ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করতে সিডিএকে পত্র দেয় এবং প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করে দেয়। ব্রিজের শেষ পিলারটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এক বছরের বেশি আগে। কিন্তু রেলের অনুমোদন না পাওয়ায় ব্রিজের উপর ৪০ ফুট করে দুটি স্প্যানের নির্মাণকাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
অপরদিকে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের সাথে শহরের সংযোগ ঘটাতে ফিডার রোড-৩ নির্মিত হচ্ছে সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে। দুই কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ রাস্তাটিতে ৮শ মিটারের মতো একটি ওভারপাস রয়েছে। এই ওভারপাসের নির্মাণ কাজ শেষ হয় দুই বছর আগে। ৭.৬ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করে নির্মিত এই ওভারপাসে মাত্র ৪০ ফুটের একটি স্প্যান বসানো হলেই কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। অথচ রেলের অনুমোদন না পাওয়ায় এই ওভারপাসেও রেললাইনের উপর স্প্যান বসানো যাচ্ছে না। ফলে এই রাস্তাটিও ঝুলে রয়েছে। ব্রিজের অভাবে ফিডার রোড-৩ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই দুটি ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাঝে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বলা হয়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে রেললাইনের উপর সেতু নির্মাণকালে উচ্চতা নির্দিষ্ট করা ছিল ৬.৫ মিটার। ওই সময় বিভিন্ন সেতু নির্মাণকালে ৬.৫ মিটার উচ্চতা রেখে নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। সাড়ে ছয় মিটার উচ্চতার শত শত ব্রিজ রয়েছে দেশের রেললাইনের উপরে। দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুর উচ্চতা নির্ধারণ করে ৭.৫ মিটার। ওই সময় দুই বছর আগে গৃহীত প্রকল্পের আওতাধীন সেতুগুলো নিয়ে সংকট তৈরি হয়। দুই বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে এসে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুর উচ্চতা নির্দিষ্ট করে ৮.৫ মিটার। এখন ৮.৫ মিটার উচ্চতার গ্যাড়াকলে পড়ে চট্টগ্রামের দুটি ব্রিজের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। অথচ মাত্র ৪.৫ মিটার উচ্চতার দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এই ধরনের শত শত ব্রিজ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। উচ্চতা ৮.৫ মিটার নিশ্চিত করতে হলে দেশের শত শত ব্রিজ ভেঙে ফেলতে হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাথে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, দুটি ব্রিজের কাজ যেহেতু ৯০ শতাংশেরও বেশি শেষ হয়েছে সুতরাং ৭.৮ মিটার উচ্চতায় বাকি কাজ সম্পন্ন করার অনুমোদন দেয়া হবে। যখন জরুরি প্রয়োজন হবে তখন ব্রিজগুলো ভেঙে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের শেষ পর্যায়ের এসে উচ্চতা বাড়ানোর জন্য পুরো প্রকল্পটি পরিত্যক্ত করা ঠিক হবে না। উপরোক্ত আলোচনার পর সিডিএর সাথে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চুক্তি করার কথা। এই চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগ থেকে সিডিএকে অনুমোদন দেয়া হলেও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। অনুমোদনের অভাবে চুক্তিটি সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ফৌজদারহাট ব্রিজটির পাশে ৬.৫ মিটার উচ্চতার একটি ব্রিজ রয়েছে। ওই ব্রিজটি দিয়ে এখন যান চলাচল করছে। সরু ব্রিজটি ওই রাস্তার চাহিদা মেটাতে না পারায় ফৌজদারহাট অংশে নিয়মিত যানজট চলছে। আগামী ডিসেম্বরে টানেল চাওয়ার হওয়ার পর ফৌজদারহাট অংশের যানজট আরো বাড়তে পারে।
পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডে চলাচলকারী শহরের গাড়িগুলো বর্তমানে ফৌজদারহাট হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড ধরে অলংকার মোড় হয়ে শহরে ঢুকছে। অথচ এসব গাড়ি ফিডার রোড-৩ ধরে সাগরিকা হয়ে শহরে প্রবেশ করলে ফৌজদারহাটের যানজট অনেক কমে যায়। শুধুমাত্র সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশের ওভারপাসের ৪০ ফুট একটি স্প্যানের জন্য থমকে থাকা রাস্তাটি চালু না হওয়ায় গাড়িগুলোকে অন্তত ১৫ কিলোমিটার বাড়তি ঘুরে শহরে ঢুকতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রকল্প দুটির মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রিজগুলো নির্মাণ করে প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে এই প্রকল্পের টাকা ফেরত যাবে। তাছাড়া ব্রিজগুলোও দীর্ঘমেয়াদী পরিত্যক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। চুক্তি হয়েছে, সমঝোতাও হয়েছে। তিন মাস আগে চুক্তি হলেও অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারছি না।
রেলওয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় আমরা অগ্রসর হতে পারছি না। মন্ত্রী মহোদয়ের অনুমোদন পেলে চুক্তি সম্পাদন করে ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৫ দিন পিছিয়ে সম্মেলন ৩১ অক্টোবর
পরবর্তী নিবন্ধঅনুমোদনের তিন বছরেও নিয়োগ হয়নি ঠিকাদার