চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস সেবা সংস্থাগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বৈঠকে যে কোনো মূল্যে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সংকটের অবসান করার তাগাদা দেয়া হয়েছে। আলোচনার পর বিভিন্ন সংকট নিরসন এবং সমন্বয়ের জন্য চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসানকে প্রধান করে একটি কোঅর্ডিনেশন সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই কমিটি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহিত প্রকল্পগুলো মনিটরিং করবে। একই সাথে চট্টগ্রামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর আলাদা একটি প্রকল্প গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে। যাতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় উত্তোলন করা ময়লা আবর্জনাসহ বিভিন্ন বর্জ্য রিসাইক্লিং করার ব্যবস্থা থাকে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহিত তিনটি প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়া এবং মাত্র ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতে নগরী ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব একটি বৈঠক আহ্বান করেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর দফতরে মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ সচিব, নৌ পরিবহন সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহিত তিনটি প্রকল্পের পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে প্রকল্প তিনটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি প্রকল্পগুলোর দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানতে চান। এই সময় প্রকল্প তিনটির পরিচালকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকূলতা তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বলে তারা উল্লেখ করেন। প্রকল্পগুলোতে আর্থিক সংকটের কথাবার্তা নিয়েও আলোচনা হয়।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত মনিটরিং সেলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, প্রকল্প তিনটির পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সদস্য করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহিত প্রকল্পগুলো মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবে। প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির ব্যাপারটিও এই কমিটি দেখভাল করবে।
করোনাকালে প্রকল্পগুলোর আর্থিক সংকট তৈরি হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে অর্থ সচিব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পগুলো যাতে আর্থিক কোনো সংকটে না পড়ে তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে।
ভূমি হুকুমদখলে দেখা দেয়া জটিলতা নিরসনে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। কোন কিছুতেই যেন প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বৈঠকে সবগুলো সংস্থা যথাযথভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প তিনটি বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করে।
অপরদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খাল ও নালা থেকে প্রচুর ময়লা আবর্জনা উত্তোলন করা হলেও তা ম্যানেজ করার কোনো ব্যবস্থা চট্টগ্রামে নেই। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণের তাগাদা দিয়ে দ্রুত এই প্রকল্প সারপত্র তৈরি করে জমা দেওয়ারও নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বর্জ্য রিসাইক্লিনের ব্যবস্থা করা না হলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি আসবে না বলেও বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুইটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো ইতোমধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও না হওয়ায় নতুন করে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।