দীর্ঘ ১৮ বছর পর নগরের প্যারেড ময়দানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘তাফসিরুল কুরআন মাহফিল’। ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ মাহফিল শুরু হবে আগামীকাল সোমবার। পাঁচদিন ব্যাপি মাহফিল চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। মাহফিলের প্রধান মুফাচ্ছির হিসেবে ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারি শেষ দিন (শুক্রবার) উপস্থিত থাকবেন। এবার প্যারেড মাঠে মহিলাদের বসার ব্যবস্থা থাকবে না। মূল মাঠের দক্ষিণে এবং উত্তরে তাদের বসার জন্য পাঁচটি প্যান্ডেল করা হবে। মাহফিল সুষ্ঠুভাবে সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মাহফিলের শান্তি ও নিয়ম শৃঙ্খলা সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। তাদের সহযোগিতার জন্য থাকবেন আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরের চকবাজার থানার একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সহ–সভাপতি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, পরিষদের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, তাফসিরুল কুরআন মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটির প্রচার বিভাগীয় দায়িত্বশীল মুহাম্মদ উল্লাহ ও ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম উল্লাহ জামান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্যারেড ময়দানে সর্বশেষ ২০০৬ সালে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ–এর তাফসিরুল কুরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাঝখানে ২০০৯ সালে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও সিএমপি প্যারেড মাঠে ১৪৪ ধারা জারি করায় শেষ পর্যন্ত মাহফিল আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। ‘পরবর্তী সময়ে মাহফিল আয়োজন বাধা ছিল কিনা; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘যে বিষয় সাংবাদিকরা জানেন সে বিষয়ে বলা মানে সময়ক্ষেপণ’।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এবারের তাফসির মাহফিলের প্রস্তুতি কাজ আরো আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে তাফসির এন্তেজামিয়া কমিটি ও ১৯টি সাব–কমিটি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবাণীতে প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আশা করছি মাহফিলে বিপুল শ্রোতার সমাবেশ ঘটবে। আমরা অনুভব করছি সেই তুলনায় মাঠটি যথেষ্ট নয়। তাই আমরা সমাবেশের সংকুলান ও শুনার সুবিধার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, প্যারেড মাঠের মূল প্যান্ডেলে এবার মহিলা প্যান্ডেল থাকবে না। মূল প্যান্ডেলে থাকবে পুরুষ শ্রোতাদের বসার ব্যবস্থা, মেহমান ও সাংবাদিকদের বসার বিশেষ ব্যবস্থা, সেনিটেশন ব্যবস্থা, দর্শক–শ্রোতাদের মৌলিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের সহায়তায় প্রয়োজনীয় স্টল। স্বেচ্ছাসেবকগণ মাঠের নিয়ম শৃঙ্খলা সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করবেন। সাথে থাকবেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মানিত সদস্যবৃন্দ।
মহিলা শ্রোতাদের বসার ব্যবস্থা তুলে ধরে বলেন, মহিলা শ্রোতাদের আসা যাওয়া বসা ও শুনার সহজ ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে এবার মূল মাঠের দক্ষিণে মহসিন কলেজের মাঠ, কাজেম আলী হাই স্কুল ও গুলজার বেগম হাই স্কুলে এবং মূল মাঠের উত্তরে কিশালয় কমিউনিটি সেন্টার ও কাপাসগোলা কলেজে মহিলা প্যান্ডেল থাকবে। এই সব প্যান্ডেলে মহিলাদের বসার, শুনার ও প্রয়োজনীয় যথাসম্ভব সেনিটেশন ব্যবস্থা থাকবে। নিয়ম শৃঙ্খলার উদ্দেশ্যে মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সহায়তায় থাকবেন আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্য বলা হয়, মূল মাঠের চারপাশের এলাকায় অবস্থান ও শুনার ব্যবস্থা থাকবে। প্যারেড মাঠের চতুর্দিকে দক্ষিণে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মোড় ও জামালখান তথা চেরাগীপাহাড় মোড় পর্যন্ত, উত্তরে মেডিকেল কলেজ ও পাঁচলাইশ থানা মোড় পর্যন্ত, পূর্বে চকবাজার ধুনির পোল ও বাকলিয়া এঙেস রোড় এর সুবিধাজনক অংশ পর্যন্ত এবং পশ্চিমে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল পরবর্তী সি.জি.এস স্কুল মোড় পর্যন্ত এলাকায় অবস্থিত মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেটগুলোর সদয় সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ সব এলাকায় যে সব শ্রোতা সমবেত হবেন তাদের শুনার ব্যবস্থা থাকবে এবং যথাসম্ভব এলইডি ব্যবস্থা থাকবে। সেনিটেশন ব্যবস্থা মওজুদ রাখা হবে।
মাহফিলের অতিথি :
মহফিলে প্রধান অতিথি থাকবেন ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাস্িসরে কুরআন ও ইসলামিক স্কলার হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রধান মুফাচ্ছির হিসেবে ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারি এবং অন্যান্য মুফাচ্ছিরবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন হযরত মাওলানা মুফতি আমির হামযা, হযরত মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী ও হযরত মাওলানা আবদুল্লাহ আল আমীন। সভাপতিত্ব করবেন ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের। আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করবেন আওলাদের রাসুল (স.) হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসাইন তাহির জাবিরী আল মাদানী।