বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রামে এই সময়ে দুয়েকটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও এবার একটিও আসেনি। বিগত কয়েক বছর ধরে শীতের আমেজও ব্যতিক্রম। এ বছর পৌষ মাস শেষ না হতেই গরম অনুভূত হচ্ছে। মনে হচ্ছে শীত যেন লুকোচুরি খেলছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর পশ্চিমা উচ্চচাপ বলয় শক্তিশালী না হওয়া এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির কারণে ঠাণ্ডা কম অনুভূত হচ্ছে। তবে জানুয়ারির শেষে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমে শীত বাড়বে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবার অনেকে মনে করছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবার দেশে শীতের তীব্রতা কমে গেছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে শিল্পায়ন বেড়ে গেছে। এসব কারণে আবহাওয়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে।
নিয়ম মোতাবেক পৌষের মাঝামাঝি থেকে প্রতিবছর শীতের তীব্রতা বাড়তো। মাঘ মাসে শীতের প্রকোপ থাকতো বেশি। কিন্তু গত দুয়েক বছর থেকে স্বাভাবিক এই চিত্রের ব্যত্যয় ঘটছে। এক সময়ে শীতকাল এলে দিনে প্রায়ই সূর্যের দেখা মিলত না। থাকত কনকনে ঠাণ্ডা। বইতো মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু কোথায় সেই শীত? পৌষ শেষ হতে চলল। এখন গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সব মানুষের মুখে একই কথা ‘বর্ষায় বৃষ্টি হয় না, শীতে ঠাণ্ডা পড়ে না’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-গোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা শুনেছিলাম এবার শীত তাড়াতাড়ি চলে আসছে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, পৌষ মাসেও শীত আসেনি। এটা একেক অঞ্চলের মানুষ একেকভাবে বিশ্লেষণ করেন।’
তিনি বলেন, মৌসুমী বায়ুর প্রবাহতা, উত্তর দিক থেকে আসা বাতাসের প্রভাব, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সহ বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করে। তন্মধ্যে অন্যতম হল- ‘এল নিনো লা-নিনা’ ফ্যাক্টরও কাজ করে। দক্ষিণ আমেরিকার জলবায়ুর প্রভাব কিছুটা আমাদের দেশেও পড়ে। ভারত মহাসাগরের পানির কিছু ফ্যাক্টরও আমাদের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। যে কারণে আমাদের জলবায়ুতে স্বল্পমেয়াদের কিছু পরিবর্তন আসে। কখনো নির্ধারিত সময়ে শীত আসছে না, ঠিক সময়ে বৃষ্টি পড়ছে না। এইসব ক্ষেত্রে সূর্যের অবস্থান, আকাশে মেঘের অবস্থান ও দিক পরিবর্তন এই সময় ফ্যাক্টরগুলোও কাজ করে।’ মূলত এবার উত্তর উত্তর-পশ্চিম উচ্চচাপ সক্রিয় না হওয়ায় শীত কিছুটি বিলম্বিত হয়েছে বলে মনে করেন এ জলবায়ুবিদ।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিগত কয়েকদিন দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩-৪ ডিগ্রি। এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলেও বৃহস্পতিবার ছিল ৩১ ডিগ্রির কাছাকাছি। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেইসাথে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরণের কুয়াশা বিরাজ করতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিক হতে ঘণ্টায় ৮-১২ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এবার শীতের আগমনটা খুবই ব্যতিক্রমী। এখন পশ্চিমা উচ্চচাপবলয় কম শক্তিশালী হওয়ায় দক্ষিণা বলয় কিছুটা শক্তিশালী হওয়ার কারণে শীত আসতে পারছে না। তবে এবার জানুয়ারির শেষের দিকে এবং ফেব্রুয়ারিতে বেশি ঠাণ্ডা পড়বে। আগামী সপ্তাহ থেকে স্বাভাবিক ঠাণ্ডা পড়বে। ঋতু বৈচিত্র্য কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। শীতের চিত্রটা বিগত কয়েক বছর থেকে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ১০-১১ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে আসতো। কিন্তু এবার ১২’র নীচে নামেনি। অন্যান্য বছরে এই সময়ে এক দুইটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতো। কিন্তু এ মৌসুমে কোনো শৈত্যপ্রবাহ দৃশ্যমান হয়নি।’