পৌলমির বয়স আর কত!
তারপরও ছোটবড়ো কত ইচ্ছে। মামা বাড়ি যাবে। দাদু দিদিমা মামা মাসীকে দেখবে। দাদুর আদর দারুন মজার।দিদিমার বুকে সুখকে খুঁজে পায়। আর মাসী! অন্য রকম মিষ্টিতে ভরপুর।
একদিন মা‘র সাথে মামার বাড়ি যায় পৌলমি। কি খুশি দাদু, দিদিমা, মাসী। পৌলমিকে কোলে নেবার প্রতিযোগিতায় নেমে যায় সবাই। প্রথমে দাদুর কোল। পরপর দিদি মার, শেষে মাসীর কোল। মাসী কি আর ছাড়ে পৌলমিকে। কখনও বুকে, কাঁধে। পৌলমির অত আদর সয়না।
মা গান গায়। মিষ্টি গলা। মাসী একটুআধটু চেষ্টা করে।সুরে কমতি আছে। তবে মাসীর আঁকার হাত ভালো। ছোট বেলার কত ছবি এঁকেছে পৌলমির। ঐসব ছবি রঙতুলিতে আঁকা। মাসী কোলে বসিয়ে মিষ্টি ছবি গুলো দেখায়। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে হাসে পৌলমি।পৌলমি ভাবে ছোট বেলায় কি রকম ছিলাম, নাদুস–নুদুস। টোলপড়া গাল! লম্বা কোঁকড়ানো চুল।মুখ থেকে লালা পরা ঠোঁট। তবু মাসী চুমু খায় গালে, কপালে। রাতে চাঁদ দেখিয়ে চাঁদকে ডাকে, চাঁদ মামা চাঁদ মামা আয় আয়, পৌলমির কপালে টিপ দিয়ে যা‘!
রাতে সবাই খেতে বসে। পৌলমিকে দাদু ডাকে, দিদিভাই খেতে এসো।
মা বলে, বাবা এখনও নিজে খেতে পারে না। আমি ওকে খাইয়ে দেবো। তুমি খেতে বসো। পৌলমি বলে, না আমি তোমার হাতে খাবো না। আমি এখন বড়ো হয়েছি।দাদুর পাশে বসে খাবো। কি আর করা। দাদুর পাশে বসিয়ে দেয় পৌলমিকে।
পৌলমি একটা খায় দুটো ফেলে দেয়। এভাবে বসার চেয়ারে ভাতে ভরে যায়। মা রেগে আগুন। বাবার জন্য কিছু বলতে পারে না। খাওয়া শেষে দাদুর কোলে। দাদুকে বলে, দাদু আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।
ঠিক আছে দিদিভাই আমার সাথে শোবে। চল চল বিছানায় যাই।
রাতে দিদিমা শোবার ঘরে আসতেই দাদুকে বলে, আমার পেট বাথা করছে হঠাৎ। কি ঔষধ খাবো।
–দিদিমা মাকে ডাকো। মা তো ডাক্তার। মায়ের ব্যাগে ঔষধ থাকে। পৌলমি বলে।
–ঠিক তো দিদিভাই। মাকে ডেকে নিয়ে আসে পৌলমি।
বলে, মা দিদিমার পেট ব্যথা। তাড়াতাড়ি ঔষধ দাও।পৌলমির মা বলে,
–মা কি খেয়েছো, পেট ব্যথা করছে। মা বলে, তেমন তো কিছুই খাইনি। পৌলমি বলে, অত কথার কি আছে। মা তুমি দিদিমনিকে ঔষধ দাও, ভালো হয়ে যাবে।
মা ঔষধ দেয়। দাদুর কোলে বসে পৌলমি বলে, দাদু একটা কথা সবসময় ভাবি।
– কি ভাবো দিদিভাই। দাদুর কৌতূহলী প্রশ্ন।
– দাদুভাই আমার বন্ধুদের মামার বাড়িতে সবার মামা আছে।মামার বাড়ি এলাম।দেখো আমার মামা নেই। মামা কোথায়?
দাদুর উত্তর নেই। পরে দিদিমার কাছে ছুটে গিয়ে বলে,
–বলে, দিদিমা, আমার মামা কই?
কেউ উত্তর দিতে পারে না। কারণ ওদের দুই মেয়ে। ছেলে নেই ,মামা কোথায় পাবে পৌলমি।কেউ পৌলমির প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না।
দাদু ভাবে, এভাবে যাদের মেয়েই থাকে, ছেলে নেই। প্রশ্নতো উঠবেই। এর সমাধান কোথায়? তখন আবারও পৌলমি বলে, দাদুভাই, বলো না, মামা কোথায়? দাদুভাই চুপ। উত্তর না পেয়ে আবারও
পৌলমি ছুটে যায় দিদিমার কাছে। দিদিমনি, তুমি জানো মামা কোথায়? দিদিমনিও চুপ। পৌলমির কান্ড দেখে পৌলমির মা‘র চোখে জল ছলছল করে। দিদিমার চোখেও জল। দাদুর চোখেও তাই।
শেষমেষ পৌলমিকে নিয়ে মা অন্য ঘরে ছুটে যায়। পৌলমির ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর দাদু, দিদিমা এমন কি পৌলমির মায়ের কাছেও নেই।
তখনও পৌলমি মাকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করে,
–মা সত্যি কেউ জানে না আমার মামা কোথায়?
মা আরও পৌলমিকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।দুই চোখ গড়িয়ে জল পড়ে। চোখের জল দেখে পৌলমি জিজ্ঞেস করে,
–মা তুমি কাঁদছো? ঠিক আছে,মামা নেইতো কি! মামার বাড়ি তো আছে। চোখের জল মুছে দিয়ে পৌলমি বলে,
মা, তুমি কাঁদছো, দাদু, দিদিমা কাঁদছে। মা আর কোনদিনও মামা কোথায় জিজ্ঞেস করবো না। আর কেঁদো না মা।
পৌলমির কথায় আবেগে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে পৌলমির মা।
পৌলমি অবাক চোখে মায়ের কান্না, চোখের জল দেখতে থাকে।