‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’। নগরবাসীর অবস্থাও হয়েছে তেমন। নাগরিকদের সমস্যা ও দুর্ভোগ লাঘবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পৌরকর সংক্রান্ত দুটো প্রস্তাবের কারণেই শঙ্কিত নগরবাসী। গত ৩ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চসিক প্রস্তাব করে, পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নে ২০১৭ সালের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে কর আদায় করার। অথবা স্থগিতকৃত পুনর্মূল্যায়ন বাতিল করে নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করার।
ভবন মালিকদের শঙ্কা, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে সেই ‘অতিরিক্ত’ কর পরিশোধ করতে হবে তাদের। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নানা কারণে আর্থিক সক্ষমতা কমেছে ভবন মালিকদের। এ অবস্থায় পৌরকরের হার বাড়লে তা তাদের জন্য অসহনীয় হবে। এ বিষয়ে নাগরিক মতামত আহ্বান করে দৈনিক আজাদী। এতে সাড়া দিয়ে যারা আমাদের ইমেইলে ‘নাগরিক মতামত’ পাঠিয়েছেন, তাদের মতামত আমরা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করব। আশা করছি, সিটি মেয়র নাগরিক মতামত বিবেচনায় নেবেন। আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় কিস্তি।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন
পূর্বের মতো বর্গফুট ভিত্তিতে পৌরকর নিলে ভালো হবে
পূর্বের মতো বর্গফুট ভিত্তিতে দালানের পৌরকর নিলে নগরবাসী কোনোরকমে টিকে থাকতে পারবে। কারো বিল্ডিং থাকা তো অপরাধ নয়। এখন দেখা যায়, ট্যাক্স, মেনটেন্যান্স খরচ ইত্যাদি দেওয়ার পরে বাড়িওয়ালার ভবিষ্যতের জন্য বা প্রজন্মের চলার জন্য আর কোনো কিছুই সঞ্চয় থাকে না।
আবু তৈয়ব মিয়াজী
এই তৎপরতার অবসান চাই
অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া কর বাড়ানোর চেষ্টার মতো কুঅভ্যাস চসিকের নতুন নয়। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সময়োচিত হস্তক্ষেপে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে।
রাস্তায় বাতি জ্বলে না। নগরীর গলিগুলোতে ময়লার স্তূপ। সন্ধ্যা হলেই মশার তীব্র আক্রমণ। করোনার কারণে গৃহমালিকের চরম আর্থিক সংকট। এসবের প্রতি চসিকের কোনো দৃষ্টি নেই। অথচ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। আমরা চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত জনগণ চসিকের এই তৎপরতার অবসান কামনা করি।
স্মরনিকা বড়ুয়া চৌধুরী
পৌরকর বাড়লে মানুষ অর্থনৈতিক চাপে পড়বে
সিটি কর্পোরেশনের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স বা পৌরকর। এই কর প্রদান করে থাকেন সাধারণত সিটি কর্পোরেশনের আওতায় যে সমস্ত গৃহ মালিক এবং ফ্ল্যাট মালিক বাস করেন তারা। সিটি কর্পোরেশন এ সমস্ত রাজস্ব বাড়ির মালিকদের নিকট হতে আদায় করে নাগরিকদের নানা সেবা প্রদান করে থাকেন। যদিও প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই করের হার রদবদল করে নাগরিকদের সেবা প্রদান করা হয়। সেই যৌক্তিকতায় পৌরকর পুনঃমূল্যায়নের সময় অনেক আগে পার হয়ে গেছে। দুই বছর আগে একবার পৌরকর পুনঃধার্য্য করে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার নির্দেশে সিটি কর্পোরেশন প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। পরবর্তীতে নাগরিকদের কষ্টের কথা বিবেচনায় এনে সেই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়।
সিটি মেয়রের এই মহানুভবতায় নাগরিকবৃন্দ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু দুই বছর পর এই মহামারীর সময় আবারও সিটি কর্পোরেশন পৌরকর বাড়ানোর যে যৌক্তিকতা প্রদর্শন করছে তাতে করে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হবে। যদি পৌরকর বাড়ানো হয় তাহলে গৃহ মালিক সেই দায়ভার অনায়াসে ভাড়াটিয়ার কাঁধে তুলে দেবেন। মহামারীর এই সময়ে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকে অর্ধেক বেতনে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। অনেকে ছোটখাট ব্যবসা শুরু করে জীবন অতিবাহিত করছেন। তাদের যদি পৌরকর বাড়ানোর বদৌলতে অতিরিক্ত বাড়িভাড়া গুণতে হয় তাহলে সাধারণ জনগণ না খেতে পেয়ে মারা যাবে।
অন্যদিকে ফ্ল্যাট মালিকগণ যারা কিছু টাকা জমিয়ে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছেন, যাদের হয়তো অর্থ উপার্জনের সে রকম ব্যবস্থাও নেই, পৌরকর বৃদ্ধি তাদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করবে। ফলে সাধারণ জনগণ পৌরকর বৃদ্ধির কারণে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক চাপে দিন কাটাবে। এতে করে সবার স্বাস্থ্য এবং মানসিক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা আছে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মেয়রের নিকট স্বাভাবিকভাবেই নগরবাসীর অনেক প্রত্যাশা থাকে। আশা রাখি, অভিজ্ঞ মেয়র মহোদয় নাগরিকদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে সুবিবেচনাসুলভ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌরকর সংক্রান্ত উদ্ভূত বিষয়টি স্থগিত ঘোষণা করে নাগরিকদেরকে স্বস্তির জীবন প্রদান করবেন।