চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পোষ্য কোটা বাতিল ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকারীদের বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে গত প্রায় এক মাস ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করেছে। সমাধানের জন্য গত শনিবার সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড়।
এবার পোষ্য কোটা বাতিল ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকারীদের বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষার্থী। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেন তারা। গতরাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করছিলেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অনশনে বসা ছয় শিক্ষার্থী হলেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থান চোখ হারানো শিক্ষার্থী মো. শুভ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, রশিদ দিনার, তানিম মুশফিক, রিয়াদ ও সাইরিব রহমান সুপ্ত।
অনশনে বসা বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শুভ হোসেন বলেন, পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটি কোটা। এই কোটার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়া জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহতরা এখনও কাতরাচ্ছেন। অথচ হত্যাকারীদের কোনো উল্লেখযোগ্য বিচার হয়নি। ৯ দফা দাবিতে আমরা অনশন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, শহীদ হৃদয় তরুয়া এবং শহীদ ফরহাদের রক্তের ওপর বসে আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ তাদের কাছে এখন খুনিদের বিচার চাইতে হচ্ছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যারা হত্যা হামলার সঙ্গে জড়িত, তারা বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা দিচ্ছেন। এসব হামলাকারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ৫৭ জনকে বহিষ্কার করেছে, সেখানে চবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি। চবির সকল শিক্ষার্থী পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে থাকার পরও পোষ্য কোটা এখনো বহাল রয়েছে। আমরা কোনো ধরনের কোটা আর দেখতে চাই না।
এ বিষয়ে চবি উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের এসব দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। শিক্ষার্থীরা অনশন করছে, এটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা। আমরা সবাই মিলে বসে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারি। যারা জুলাই গণ–অভ্যুত্থান হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর শিক্ষার্থীদের স্থান মাটিতে নয়, তাদের স্থান আমাদের বুকে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচনায় আসার আহ্বান জানান এবং জুলাইয়ে অপরাধীদের বিচারের জন্য এক সপ্তাহ সময়ের আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, যারা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সকল প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীরা এমন কেউ যদি পড়াশোনা শেষ করে চলেও যায়, তবুও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমন সার্টিফিকেট দিতে পারে, তেমনি আবার সার্টিফিকেট বাতিলও করতে পারে। আমি কোনো প্রকার কোটার পক্ষে নই। আমরাও চাই যাতে কোনো প্রকার কোটা না থাকে। তবে সমস্ত কিছুর একটা প্রক্রিয়া আছে। আমাদের তোমরা সময় দাও, আমরা সকল সমস্যার সমাধান করবো।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ২০০ টাকা করতে হবে। পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা, বাড়ির দূরত্ব এবং মেধার ভিত্তিতে বন্ধ হলগুলোতে আসন বরাদ্দ ও অতিদ্রুত নতুন দুইটি হল নির্মাণ করতে হবে এবং কটেজের শিক্ষার্থীদেরও হলের মেসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল এক্সট্রা কারিকুলার সংগঠনসমূহকে অফিস বরাদ্দ দিতে হবে। অনতিবিলম্বে টিএসসি নির্মাণ করতে হবে। অতি দ্রুত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক ই–মেইল প্রদান ও অনলাইনে রেজাল্ট প্রকাশসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড অনলাইনভিত্তিক করতে হবে। সমপ্রতি ঘটে যাওয়া গুপ্ত হামলার সুষ্ঠু বিচার এবং ক্যাম্পাসে ও শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।