পোল্ট্রি খামারের বর্জ্যে শঙ্খে দূষণ

হাতে নাতে ধরতে ভোর বেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২২ মার্চ, ২০২১ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের এক্কাইত্যা পুকুর পাড়। ওইখানে রয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনের মালিকানাধীন দুটি পোল্টি ফার্ম। ‘ঝিনুক পোল্টি ফার্ম ও বনায়ন প্রকল্প’ এবং ‘ঝিনুক পোল্ট্রি ফার্ম ইউনিট-২’ নামে দুই খামারে রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ডিম উৎপাদনকারী লেয়ার মুরগি। এই দুই খামারে দৈনিক তৈরি হওয়া প্রায় দুই টন বর্জ্য দীর্ঘদিন ধরে ফেলা হচ্ছে পাশের শঙ্খে। এসব বর্জ্য নদীতে ফেলার সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে অবৈধ জেটিও। আবার বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হওয়া শঙ্খের এ পানি সেচের মাধ্যমে ওই এলাকার কৃষি জমিতে ব্যবহার করে ক্ষতির শিকার হয়েছেন কয়েকশ কৃষকও। সেচ দেওয়ার পর মরে গেছে করলাসহ গ্রীষ্মকালীন সবজির অনেক ক্ষেত। দীর্ঘদিন ধরে পোল্ট্রি ফার্ম দুটির বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে শঙ্খ নদীকে দূষিত করার অভিযোগ আসলেও প্রত্যেকবারেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছিল ফার্ম দুটির মালিকপক্ষ। এবার হাতেনাতে ধরতে গত ২০ মার্চ সকালে এনফোর্সমেন্ট চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার একটি টিম। এসময় নদীতে বর্জ্য ফেলার সময় বর্জ্য ভর্তি দুটি ট্রাকও জব্দ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম। এতদিন অস্বীকার করলেও হাতেনাতে ধরা পড়ার পর নদীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছেন ফার্ম দুটির মালিক ও পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযান পরিচালনাকারী পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম রোববার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ঝিনুক পোল্ট্রি ফার্ম ও বনায়ন প্রকল্প’ এবং ‘ঝিনুক পোল্ট্রি ফার্ম ইউনিট-২’ নামের খামার দুটি থেকে প্রতিদিন দুই টনের মতো বর্জ্য বের হয়। ফার্ম দুটি প্রতিষ্ঠার সময় আলাদা বায়োগ্যাস প্লান্ট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। একটি ফার্মে বায়োগ্যাস প্লান্ট চললেও অন্যটিতে নেই। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠান দুটির বর্জ্য শঙ্খ নদীতে ফেলা হচ্ছিল। এতে মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছিল শঙ্খ। এ দূষিত পানি দিয়ে আশেপাশের সবজি ক্ষেতে সেচ দিয়ে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা শঙ্খ নদী দূষণ করে আসলেও বিষয়টি প্রত্যেকবারই অস্বীকার করে আসছিলেন। এখন হাতেনাতে ধরতে ভোরে চট্টগ্রাম শহর থেকে যাত্রা করেছি। নদীতে বর্জ্য ফেলার সময় হাতেনাতে তাদের ধরেছিও। এর পর নদীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি তারা স্বীকারও করেন। এখন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেবো। তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট মামলাও হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুকুরিয়া এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘আসহাব চেয়ারম্যান পুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সরকারি দলের নেতা হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ সহজে মুখ খুলতে সাহস করেন না। তিনি অনেক দিন ধরে শঙ্খ নদীতে ফার্মের বর্জ্য ফেলে আসছেন। বর্জ্যগুলো খুবই বিষাক্ত। দুর্গন্ধে আশপাশ দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টসাধ্য।’
এ ব্যাপারে রোববার সন্ধ্যায় জানতে চাওয়া হলে পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন শঙ্খ নদীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার একটি ফার্মের বায়োগ্যাস প্লান্ট অনেক বড়। অন্য ফার্মের বর্জ্যও সেই প্লান্টে ফেলা হয়। নদীতে ফেলা হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম আমাদের ফার্মে এসেছিল। তাদের আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন,‘শঙ্খ নদীতে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষণের অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের একটি টিম এনফোর্সমেন্ট চালিয়েছে। এখন প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক মোবাইলের জন্য ছুরির ১৬ আঘাত
পরবর্তী নিবন্ধঝুলে গেল সাকিবের আইপিএল যাত্রা