করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর লকডাউনে প্রথম দুইদিন পরিবহন সংকটের কারণে রাস্তায় অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশায় চড়তে হলেও চতুর্থদিনে চিত্র একেবারে উল্টো। সপ্তাহের প্রথম দিন হিসেবে রোববার সীমিত আকারে ব্যাংক ও জরুরি সেবানির্ভর অফিস খোলা থাকলেও নগরীতে ঘুরেও যাত্রী মিলেনি রিকশায়। বিকাল তিনটা বেজে ১০ মিনিট। চকবাজারে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ রিকশাচালক মফিজুর রহমান। মফিজ হোটেল শ্রমিকের কাজ করতেন। লকডাউনে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাড়ায়চালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। লকডাউনের প্রথমদিনে (বৃহস্পতিবার) ৯শ টাকা আয় হয় তার। কিন্তু সময় না পেরুতেই রোববার সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ভাড়া পেয়েছেন মাত্র ১৩০ টাকা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর নগরীর ওয়াসা পর্যন্ত একটি ভাড়া নিলেন মাত্র ৪০ টাকায়।
রিকশার যাত্রী আবু জাহেদ জানান, চকবাজার গুলজার মোড় থেকে ওয়াসা মোড়ে যাচ্ছি। আজকে ৪০ টাকা ভাড়া চাইলেন। দরদাম করতে হয়নি। অথচ গত বৃহস্পতিবার যেতে হয়েছে ৭০ টাকায়। আজকে রাস্তায় রিকশার সংখ্যাও এমনিতে বেশি। রিকশাচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘হোটেলে মেসিয়ারের কাজ করতাম। খাওয়া থাকাসহ দিনে তিনশ টাকা বেতন পেতাম। তাছাড়া টিপস (বখশিস) পেতাম আরও দুই তিনশ টাকা। সবমিলিয়ে ভালই চলত। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ায় হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। বৃহস্পতিবার নয়শ টাকা ইনকাম হয়েছিল। শুক্রবার ৬শ টাকা, শনিবারও সাড়ে চারশ টাকা আয় হয়েছে। আজ সকাল ৮টায় এসেছি। তিনটা পর্যন্ত মাত্র ১৩০ টাকা ভাড়া পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সপ্তাহে দুই হাজার টাকা এনজিও’র কিস্তি দিতে হয়। বসে থাকলে সুদে কর্জ নিতে হবে। তাই রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। গত লকডাউনেও রিকশা চালিয়েছি।’
রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে নগরীর কাজির দেউড়ি, লালখান বাজার, টাইগারপাস, দেওয়ান হাট, আগ্রাবাদ, ওয়াসা মোড়, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, ষোলশহর রেলস্টেশন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট মোড়, চকবাজার, আন্দরকিল্লা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক মোড়ে ২০ থেকে ৫০টি রিকশা অলস দাড়িয়ে রয়েছে যাত্রী পাওয়ার আসায়। আগ্রাবাদ মোড়ে রিকশাচালক জানে আলম বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে রিকশা চালাই। আজকে সকাল থেকেই রাস্তায় যাত্রী তেমন নেই। অনেকে হেঁটে চলাফেরা করছেন। রিকশার সংখ্যাও অন্য দিনের চেয়ে বেড়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ায় অনেকে পেশা পাল্টে রিকশা চালাচ্ছে।’
বহদ্দারহাট মোড়ে কথা হয় সেলিম মিয়া নামের একজনের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি সিএনজি চালাই। লকডাউনে মালিক সিএনজি বের করতে দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে নেমেছি। কারণ দুই বাচ্চা পড়ালেখা করে। তাদের প্রাইভেট টিচারের বেতন দিতে হবে। মাস শেষে বাসা ভাড়াও দিতে হবে। একদিন বসে থাকলেই দেনা বাড়বে। পরে সেই দেনা শোধ করতে আবারো দেনায় জড়াতে হবে।’