পেশায় তিনি চা দোকানি। এর আড়ালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে–ঘুরে দোকান, বাসাবাড়িতে চুরি তার অন্যতম পেশা। নগরীর হাজারি গলিতে মালিককে কৌশলে বের করে দিয়ে দোকান থেকে অভিনব উপায়ে ১৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় ধরা পড়ার পর পুলিশ তার চুরির কৌশল সম্পর্কে জানতে পেরেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকার লোকজন তার চুরির স্বভাব সম্পর্কে অবহিত থাকলেও পেশাদার চোরে পরিণত হওয়ার বিষয়টি জানতো না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমির হোসেন (৩৮) নামে ওই চোরকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আমির নগরীর চান্দগাঁও থানার মধ্যম মোহরা ওয়াসা রোডের বাসিন্দা। বাসার পাশেই শাহ আমানত হোটেল এন্ড ঝাল বিতান নামে তার একটি চা–নাস্তার দোকান আছে। অভিযান পরিচালনাকারী কোতোয়ালী থানার এসআই মোমিনুল আজাদীকে জানান, রোববার সকালে আমির ক্রেতা সেজে উদয়ন জুয়েলার্সে গিয়েছিলেন। মালিককে বিয়ের
জন্য বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার কেনার কথা বলেন। তখন শিবপদ তাকে কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে অর্ডার দিতে বলেন। আমির পরদিন তার স্ত্রীকে নিয়ে আসার কথা জানিয়ে মালিকের ফোন নম্বর নিয়ে আসেন।
সোমবার সকালে আমির শিবপদকে ফোন করে বলেন, তিনি হাজারী লেইন কালীমন্দিরের সামনে তার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন, দোকান চিনতে পারছেন না, মালিক যেন গিয়ে তাদের নিয়ে যান। আমিরের কথায় বিশ্বাস করে শিবপদ দোকান খোলা রেখে কালীমন্দিরের সামনে যান। ফিরে দেখেন তার দোকানের সিন্দুক খোলা। সেখানে রক্ষিত ১৯ ভরি পাঁচ আনা চার রত্তি ওজনের কয়েকটি স্বর্ণের চেইন, হাতের ব্রেসলেট, কানের দুল নেই। এ ঘটনায় জুয়েলার্সের মালিক শিবপদ ধর বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোমিনুল হাসান আরও বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায়, জুয়েলার্সের মালিক দোকান থেকে বের হওয়ার পর বর্ণিত ব্যক্তি সকাল ১০টা ৪১ মিনিটে দোকানে প্রবেশ করেন। ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি বেরিয়ে যান। আমরা ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোহরায় তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করি। এরপর আমিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার চা দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে স্বর্ণালঙ্কারগুলো উদ্ধার করা হয়।
এসআই মোমিনুল হাসান বলেন, আমিরের চুরির স্বভাব পুরনো। এলাকার লোকজন তাকে আমির চোরা বলে ডাকে। বছরখানেক আগে এলাকায় দোকান দিয়ে চা–নাস্তা বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন সকালে ২–৩ ঘণ্টার জন্য দোকান থেকে বেরিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে কোথাও কোনো জুয়েলারি দোকান, মুদির দোকান খোলা দেখলে ক্রেতা সেজে দোকানে ঢুকে এবং দোকানদারকে ব্যস্ত রেখে কৌশলে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল চুরি করেন। পাশাপাশি কোনো বাসা বাড়ির দরজা খোলা দেখলে কৌশলে বাসা বাড়িতে ঢুকে বাসার ভেতর থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার চুরি করতেন। ছোট–বড় মিলিয়ে অন্তত দেড়শ দোকানে চুরির তথ্য আমির স্বীকার করেছেন।