পেশাদার চালকদের ডোপ টেস্ট সংখ্যা দ্বিগুণ চমেক হাসপাতালে

বরাদ্দের অভাবে শুরু করতে পারছে না বিআইটিআইডি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

পেশাদার চালকদের ভোগান্তি কমাতে ডোপ টেস্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এতোদিন দৈনিক ২৫টি টেস্ট করলেও গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) থেকে দ্বিগুণ সংখ্যায় (৫০টি) এ টেস্ট করা হচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, আমাদের মূল সমস্যা জনবল স্বল্পতায়। জনবল পেলে টেস্টের সংখ্যা আমরা আরো বাড়াতে পারতাম। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে সেটি আমরা পারছিনা। তবে চালকদের ভোগান্তি কমাতে বিদ্যমান সংকটের মধ্যেও এই টেস্টের সংখ্যা আমরা দ্বিগুণ করেছি। এখন আমরা দিনে অন্তত ৫০টি ডোপ টেস্ট করছি। যদিও অধিকাংশ দিনে ৫০টির বেশি টেস্ট করা হচ্ছে। অন্তত একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেলে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো যেত বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।

প্রসঙ্গত, পেশাদার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে লাইসেন্স আবেদনের সাথে ডোপ টেস্টের সনদও জমা দিতে হচ্ছে পেশাদার চালকদের। এক পরিপত্রের মাধ্যমে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে নতুন এ নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। তবে নতুন এ নিয়ম চালুর পর থেকে বড় ধরণের ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রামের পেশাদার চালকরা। মহানগর ও জেলায় কেবল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই তাদের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে তাও দিনে ২৫ জনের বেশি নয় (শনিবারের আগ পর্যন্ত)। এর বাইরে অন্য কোন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চালকদের এ ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে গিয়ে সহসাই ডোপ টেস্টের সুযোগ মিলছেনা পেশাদার চালকদের। টেস্টের সিরিয়াল মিলছে ৬ থেকে ৭ মাস পর! আবার টেস্ট রিপোর্ট/সনদ ছাড়া লাইসেন্সও মিলছেনা। লাইসেন্স না থাকলে সড়কেও প্রতিনিয়ত ভোগান্তি। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের পেশাদার চালকরা এখন নিদারুণ অসহায়। এ নিয়ে গত ৯ এপ্রিল ‘পেশাদার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স/ডোপ টেস্টের সিরিয়াল পেতেই ৬ মাস’ শিরোনামে দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর চালকদের ভোগান্তি কমাতে ডোপ টেস্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করল চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ৯ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খুব শীঘ্রই ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে চালকদের এ ডোপ টেস্ট চালুর কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে এখন (গতকাল) পর্যন্ত চালকদের ডোপ টেস্ট চালু হয়নি। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এ টেস্ট চালু করা যাচ্ছেনা বলে বিআইটিআইডি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. মো. শাকিল আহমেদ গতকাল আজাদীকে বলেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এ বিষয়ে আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। আমরা মোটামুটি প্রস্তুত। কিন্তু ডোপ টেস্টের জন্য কিট ও রি-এজেন্ট প্রয়োজন। যা আমাদের নেই। অর্থ বরাদ্দও পাইনি। যার কারণে চালকদের এ ডোপ টেস্ট আমরা চালু করতে পারছিনা। চালু করা সম্ভব হলে দিনে অন্তত ২৫টি টেস্ট করা যাবে বলেও জানান বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. মো. শাকিল আহমেদ।

উল্লেখ্য, পেশাদার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করে গত ১২ জানুয়ারি পরিপত্র জারি করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের স্বাক্ষরে জারিকৃত পরিপত্রে ৩০ জানুয়ারি থেকে নতুন এ নিয়ম কার্যকরের কথা উল্লেখ করা হয়। পরিপত্র অনুযায়ী, পেশাদার মোটরযান চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে প্রার্থীর আবেদনপত্রের সাথে সরকারি হাসপাতাল কর্তৃক সম্পাদিত ডোপ টেস্ট রিপোর্ট বা সনদ দাখিল করতে হবে। ডোপ টেস্ট রিপোর্ট/সনদ পজিটিভ হলে (মাদক সেবনের আলামত পাওয়া গেলে) বা এতে কোনও বিরুপ মন্তব্য থাকলে সেক্ষেত্রে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না। ঢাকা মহানগরের ৬টি প্রতিষ্ঠান এবং সারাদেশে সকল পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে এ ডোপ টেস্ট করা যাবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। সরকারি ভাবে এই টেস্ট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০০ টাকা। বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জানুয়ারি নতুন নিয়ম কার্যকরের পর তারা (বিআরটিএ) ৩১ জানুয়ারি থেকে ডোপ টেস্টের জন্য চিঠি ইস্যু শুরু করেন।
ওই সময় থেকে গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার চালকের ডোপ টেস্টের জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। আর একই সময়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে প্রায় দেড় হাজার জনের। হিসেবে আরো চার হাজার চালক ডোপ টেস্টের অপেক্ষায়। যদিও দিন দিন এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানান বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) রায়হানা আক্তার ঊর্থী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে কারের ধাক্কায় শিশু নিহত
পরবর্তী নিবন্ধব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ